সোমবার, ৯ মার্চ, ২০১৫

বাংলা লিখনের আজন্ম দুর্দশা ঘুচুক --১ম



বাংলা লিখনের আজন্ম দুর্দশা ঘুচুক(৭টির) --১ম



মোট সাতটি অংশ




বাংলা লিখনের আজন্ম দুর্দশা ঘুচুক(৭টির) --১ম



লেখাটি অহনলিপি-বাংলা১৪(AhanLipi-Bangla14) ফন্টে পড়তে হবে, নচেৎ লেখাটির বক্তব্য স্পষ্ট হবে না৤ ফন্ট ডাউনলোড



অহনলিপি-বাংলা১৪(AhanLipi-Bangla14) ফন্ট প্যাকেজ ডাউনলোড লিংক:
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip

অথবা লিংক পেতে দেখুন





সঙ্গে দেওয়া ফাইল দেখে নিতে হবে৤

অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default text font setting)
Default text font setting ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং

এবং



অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default Internet setting)

(Default font setting ডিফল্ট ফন্ট সেটিং)

on internet(Mozilla Firefox)
(top left) Tools  
              Options--contents
              Fonts and Colors
              Default font:=AhanLipi-Bangla14
                        Advanced...
                                    Fonts for: =Bengali
                                    Proportional = Sans Serif,   Size=20
                                    Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Sans Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Monospace=AhanLipi-Bangla14,  Size=20
                                    -- OK
            Languages
            Choose your preferred Language for displaying pages
            Choose
            Languages in order of preference
            Bengali[bn]
            -- OK
 -- OK

          এবারে ইন্টারনেট খুললে ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’ ফন্টে সকলকিছু দেখা যাবে৤ নেটে এই ফন্টে সব কিছু লেখাও যাবে৤






বাংলা লিখনের আজন্ম দুর্দশা ঘুচুক -১

 মনোজকুমার দ. গিরিশ
 মণীশ পার্ক, কোলকাতা



প্রথম অংশ

(মোট সাতটি অংশ)

       বাংলা মুদ্রিত হরফ নিয়ে ইংরেজিতে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন ইংরেজ মহিলা ডঃ ফিয়োনা জি ই রস৤ 

ডঃ ফিয়োনা জি ই রস


গ্রন্থটি ১৯৯৯-তে বিদেশে প্রকাশিত হয়, তার ভারতীয় সংস্করণ ২০০৯-এ প্রকাশ করেছেন কোলকাতার প্রকাশক-- সাহিত্য সংসদ৤ যে-বইটি ভারতীয় কেউ লিখলে সঠিক হত সেটি লিখলেন এক বিদেশিনি৤ বাংলা ছাপার ব্যাপারে প্রথম থেকে বিদেশিদের উদ্যোগই প্রধান৤ বলা ভালো তাদের উদ্যোগই প্রায় সবটুকু৤ আমরা তাদের অনুসরণ করে একটু একটু করে এগিয়েছি৤ 

প্রথম বিচল বাংলা হরফ বা মুভেবল(movable) টাইপ তৈরি করেন ইংরেজ চার্লস উইলকিনস(Charles Wilkins) 

   চার্লস উইলকিনস(1749/50-1836)


তাঁকে সহায়তা করেন দেশি কর্মী পঞ্চানন কর্মকার৤ (এর পরে পঞ্চাননের জামাতা মনোহর মিস্ত্রি, ও তার পুত্র ‎কৃষ্ণচন্দ্র মিস্ত্রি মুদ্রণ শিল্পের এই দক্ষতার ধারা বজায় রেখেছিলেন৤ ‎পঞ্চাননের চেয়ে তাঁর জামাই মনোহর আরও বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন, এবং ‎মনোহরের পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র অতীব দক্ষতা অর্জন করেন)৤ 

বাংলা বিচল হরফে প্রথম মুদ্রিত বই হল--A Grammar of the Bengal language by Nathaniel Brassey Halhed, [এখানকার Bengal language নামটি কিন্তু Bengallanguage নয়] বইটি ইংরেজিতে লেখা


ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড(1751-1830)



[বইটি ইংরেজ হ্যালহেড প্রণীত, ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গের হুগলিতে ছাপা, এবং বিদ্যাসাগরের (সেপ্টেম্বর ২৬, ১৮২০) জন্মের ৪২ বছর আগে]৤


১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হুগলিতে ছাপা হ্যালহেডের 
ইংরেজিতে লেখা বাংলা ব্যাকরণ বই



          ইংরেজিতে লেখা বই, আর তাতে বাংলা হরফে প্রচুর উদাহরণ ছাপা, পৃষ্ঠা ভরে৤ বাংলা বিচল হরফে প্রথম ছাপা শুধু নয়, অতীব প্রশংসনীয় কাজ, পরে সেই হরফ বুননের রীতি অনেকটা পালটে অন্যরকম হয়েছে, যাকে সঠিক অগ্রগতি বলা চলে না৤ যদিও কিন্তু সেই পালটে যাওয়া অন্যরকম ধরনেই বাংলা ছাপার কাজ এখনও চলছে৤ এই ডিজিটাল যুগেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি৤ হায়, এমনকী এই সর্বান্তিক(latest) ইউনিকোড ফন্টের যুগেও নয়!

          বাংলা ছাপার হরফ সুবিন্যস্ত হয়েছে, সুন্দর হয়েছে, কিন্তু সেই প্রথম যেভাবে বাংলা ছাপাকে চার্লস উইলকিনস উপস্থিত করেছিলেন তা থেকে বস্তুত তার অবনমন ঘটেছে বলা যায়৤ বিদেশি বলেই বাংলা লেখার রীতির কোনও প্রাক-সংস্কার তাঁর এবং হ্যালহেডের ছিলনা৤ ফলে ইংরেজি যেভাবে লেখা হয়, লেখার সেই মনোভাব নিয়ে বাংলা হরফের মুদ্রণযোগ্য বিন্যাস গঠন করেন, এবং তা যে অত্যন্ত লজিক্যাল হয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না৤ আমরা হয়তো মনে মনে ধরে নিয়েছি বিদেশি তো, তাই বাংলাটা ঠিকভাবে লিখতে পারেন না, তাই এরকম অদ্ভুতভাবে হরফ বিন্যাস করেছেন৤ এর ভিতরকার নিবিড় গুণপনা আমাদের হয়তো চোখ এড়িয়েই গেছে৤ তাই বাংলা মুদ্রণের যতই বয়স বেড়েছে ততোই তা অধিক ‘বঙ্গীয়’ হয়ে উঠেছে! 

         আর আশ্চর্য যে এখনও তার বঙ্গীকরণ ঘটেই চলেছে৤

         হরফে উ-কার, ঊ-কার, ঋ-কার জুড়বার কালে তার সাধারণ বিন্যাস তখনও সব ক্ষেত্রে একইরকম ছিল না, এখনও নেই৤ 






    
 হাতে লেখার পক্ষে
রূপগুলি বেশি সুবিধাজনক হতে পারে, কিন্তু বাংলা মুদ্রণেও হাতের লেখার সেই ঠিক একই রূপকে বজায় রাখায় তা বাংলা মুদ্রণকে করেছে পশ্চাৎপদ৤ হাতে করে লেখার সময়ে ‘র’-এর তলায় উ-কার(ু) দিলে র-এর বিন্দু এবং উ-কার মিলে একাকার হয়ে যায়, তাই র-এর সামনে অন্যভাবে উ-কার দেওয়া সুবিধাজনক৤ 



তা বলে সেটা ছাপায়ও চালাতে হবে এটা ঠিক নয়৤  

এর অবশ্য একটা অন্য দিক আছে তা হল বাংলায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বর্ণ হল ’র’৤ আর ‘র’ লিখতে হলে বিন্দু দেবার জন্য কলম তুলতে হয়৤ তাই একই বর্ণে উ-কার লেখার জন্য দুবার কলম না-তুলে  
লেখা হয়তো ভালোই৤ কিন্তু কথা হল এই অধিক ব্যবহারের হিসেবটা কি সেকালে জানা ছিল? কম্পিউটারে বাংলা ফন্ট প্রথম তৈরি করতে গিয়ে সমর ভট্টাচার্যই বোধহয় প্রথম এই হিসেবটি তৈরি করেন৤ আমি সেটা জানতাম না বলে আমাকেও সে হিসেবটা করে নিতে হয়েছে৤ বলা যায় না, যাঁরাই কম্পিউটারে বাংলা ফন্ট তৈরি করেছেন, তাঁদের সবারই হয়তো এটা করে নিতে হয়েছে৤ বিশেষকরে বাংলা কিবোর্ড তৈরি করতে গেলে এটা খুবই দরকার৤


        আবার  এবং 


এদের সামনের হাতল কোন্‌টা কোন্‌ দিকে হবে তা নিয়ে দেখেছি অনেকের সংকট হয়! র-এর হাতল ঘোরানো বেশ সমস্যার কাজ!


আধুনিক ফটো কম্পোজিং-এর জন্যও এই বিচ্যুত ব্যবস্থাই সেখানে অন্তত(উপরে দেখানো) ছয়টি পৃথক টাইপফেস রাখতে বাধ্য করেছে৤ যা নিতান্ত অকারণ৤ এমন লোক দেখেছি যিনি 

না লিখে ‘রূ’ লিখে খুব প্রগতিশীল হয়েছেন বলে গর্ব অনুভব করেছেন৤  অথচ সেখানে সত্যিই 


তেমন কিছু নেই৤ কারণ এটা একটা অহেতুক ব্যতিক্রম বা বিকৃতি, সেটা ঠিক করে লেখাই ভালো৤ তবে ব্যক্তিগতভাবে কেউ গর্ব অনুভব করলে তা করুন৤

        একজন অত্যন্ত সচেতন শিক্ষক প্রশ্ন তুলেছেন,
                                ঊ-কার(ূ), এবং ঋ-কার কেন একই?

                         এর জবাব শিক্ষাবিদেরা দিন৤


লিখতে গিয়ে কি কলমের টানে তা




হয়ে গেছে কি?



.....



  পাথরে খোদাই করতে হত বলে ব্রাহ্মীলিপি ছিল বেশ সরল গঠনেরই৤ পাথরে খোদাই ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা একাধিক প্রাচীন উদাহরণ পাওয়া গেছে৤ পরে সেগুলি থেকে বিবর্তিত যেসকল লিপি এসেছে, তার লেখার মাধ্যম গাছের ছাল, পাতা, পশুর চামড়া ইত্যাদি নরম মাধ্যম৤ এসবে লেখাও হত নরম উপকরণ দিয়ে-- কালি, কাঠকয়লা, খাগের কলম, কীলক ইত্যাদি দিয়ে৤ ফলে সহজে লেখার সুযোগ আসায় লেখার সরলতা কমে পেঁচানো ভাব এসে গেল৤ যেমন আগে ব্রাহ্মীলিপিতে ‘ক লেখা হত “ + ” যেন ঠিক যোগচিহ্ন৤ পরে তা বর্তমান ‘ক’-এ পৌঁছেছে, আনুমানিক এমনি ভাবে-- 


দেখা যায়, ষ+ণ হয়ে গেল ষ৏  এর আনুমানিক বিবর্তন দেখা যাক--

যা প্রাচীন পুথিতে ছিল


আর হ্যালহেড-এর ব্যাকরণে তার রূপ হল--

তাছাড়া,


কেন সব এমন করে কলম ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে দলা করা হয়েছে?


বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া তাঁর 'বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা' [বাংলা একাডেমী:ঢাকা, প্রথম প্রকাশ,ফেব্রুয়ারি-১৯৮৪] গ্রন্থে বলেছেন-- যুক্তবর্ণের মণ্ডরূপ বা মণ্ডগঠন বিষয়ে "নিজের পছন্দ মতো 'রূপ'(shape) বের করার দিকে সংশ্লিষ্ট লিপিকরদের নজর ছিল।"(পৃঃ২৬)।


       বাংলা ছাপার জগতে কিন্তু সবচেয়ে সংকটের জায়গাটি হল যুক্তবর্ণের মণ্ডীকৃত রূপ৤ এক-একটা যুক্তবর্ণ বা যুক্তহরফ তথা যুক্তলিপি যেন এক-একটি হরফের দলা, আটার দলার মতো! দুটি/তিনটি/চারটি হরফ বা তার অংশ মিলে এক-একটা নতুন হরফ! তাই বাংলায় হরফ পরিচয় যেন শেষই হতে চায় না৤ এক জন শিক্ষিত লোকও লেখালিখির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত না থাকলে সব বাংলা যুক্তবর্ণ ঠিক ঠিক চিনতে পারবেন না৤ এটা মোটেই তার ব্যর্থতা নয়, বরং এটা বাংলা লেখার বা ছাপার ত্রুটি৤ 

        এই একই বিপত্তি দেখা যায় শিশুদের হরফ পরিচয়ের ক্ষেত্রেও৤ তারা ইংরেজি হরফ পরিচয়ের ছয় মাস বা এক বছর পরে ইংরেজি যেকোনও শব্দ অন্তত বানান করে পড়তে পারবে, কারণ সেখানে হরফ পরিচয়ের কালে হরফের যে রূপ শিখেছে, সেই একই হরফ দিয়ে ইংরেজি শব্দগুলি লেখা৤ কিন্তু বাংলায় সেটা হয় না৤ বাংলা লিখতে পড়তে বুঝতে দমহারা হতে হয়৤ এটাকে অবশ্য আমরা শিশুদেরই ব্যর্থতা বা অযোগ্যতা বলেই ধরি৤ ছাপার বা লেখার সরলীকরণের কথা ভুলেও ভাবি না৤ শিশুদের জন্য বেতই এর প্রতিকার বলে আমরা অবধারিত ভাবে জানি! ফলে ড্রপ-আউট বা শিক্ষা-ছুট অনেক বেশি৤  

          বাংলা লাইনো টাইপ যখন ১৯৩৫-এ আনন্দবাজার পত্রিকায় চালু হয় তখন তাতে বাংলা হরফ বিন্যাস অনেকটা সরল করা হয়েছিল৤ শুধু তা-ই নয়, পরে আনন্দবাজার পত্রিকা অনেকটা এগিয়ে নিয়েও গেল সেই ছাপার অগ্রগত পদ্ধতিকে৤ তখন লেখা চলছিল পারক(পার্ক)৤ একজন বিখ্যাত পণ্ডিত প্রতিবাদ করলেন, পারক(parak) মানে তো উদ্যান নয়, পারক মানে দক্ষ, পটু, সমর্থ৤ অকাট্য যুক্তি৤ তা ঠেলে আনন্দবাজার বের হতে পারল না৤ ইংরেজি লেখার প্রকৃতিতে বা স্টাইলে লিখতে পারলে বাংলা মুদ্রণ এবং বাংলা ভাষার যে বিপুল অগ্রগতি ঘটত, তথা বাংলা বর্ণমালা তার সেমি-এ্যালফাবেটিক চরিত্র ক্রমে মোচন করে একটু একটু করে পূর্ণ এ্যালফাবেটিক চরিত্রের হয়ে উঠত, তা সাহস করে শেষ অবধি বজায় রাখা গেল না৤ “আমরা ছেলেবেলায় বেত আর কানমলা খেয়ে এসব শিখেছি, এরা কেন পারবে না?” এমন অকাট্য যুক্তি খণ্ডন করার লোক পাওয়া গেল না৤ “আমরা” সময় এবং মেধার যে বিপুল অপচয় করেছি, তা চিরকাল চালু বা বজায় রাখার ব্যবস্থা, কোনও সুব্যবস্থা যে নয়, সেই ঘণ্টা বেড়ালের গলায় বাঁধা গেল না৤ আমরা ইচ্ছে করলে সরকার=সর্কার, দরকার=দর্কার, কোলকাতা=কোল্কাতা, হালকা=হাল্কা লিখতে পারি৤ ‘জানতে পারলাম সে খেলতে আসত না’= জান্তে পার্লাম সে খেল্তে আস্ত না৤ এমনভাবে লিখলেইবা কে বাধা দেবে?

          এর পরে যখন ফটোটাইপ সেটিং(পিটিএস PTS) বা বাংলা ডিজিটাল হরফ চালু হল, তখন আবার লাইনো টাইপের সারল্য ছেড়ে বাংলা মুদ্রণে হরফ-সংযোজন ব্যবস্থা বা বিন্যাস ফিরে গেল অতীতের দিনে৤ হরফ বুননের রীতি-কৌশলে অগ্রগতি থেমে গেল, বন্ধ হয়ে গেল৤ লাইনো টাইপের আলোক-সন্ধান আর জারি থাকল না৤ যদিও হরফগঠন দেখতে সুন্দরই হল৤ কিন্তু সুন্দর হওয়াই কি শেষ কথা? ভাষা এবং মুদ্রণের অগ্রগতি কি কিছু নয়? এই প্রসঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘শুধু কাজের জিনিস হলেই হবে না, সুন্দরও হতে হবে৤’ অবশ্যই তা হতে হবে, তবে তা ভাষার অগ্রগতিকে রুদ্ধ করে নয়৤ ইংরেজি ছাপার পাশে বাংলা ছাপা দেখে কী মনে হয়? সে বিন্যাস যৌক্তিক? এক হরফের পিঠে অন্য হরফ চেপে বসলে আমরা ক্লেশ অনুভব করি কি?

          একজন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র যদি জানতে চায় আমার নাম পলাশ দত্ত, কিন্তু দত্ত না লিখে কেন ‘দ-ও’(da--o) লিখি? তাকে বোঝানো কঠিন কেন “ত্ত” গঠন ‘ও’-এর মতো ‘—ও’ হয়? মিত্রও তাই, ‘মি-এ’(mi--a)! দ্বিতীয় শ্রেণি পাশ করে এলে তবে সে ‘সকল’ বাংলা শব্দ পড়তে পারবে(অবশ্য যদি পারে! কারণ বয়স্করাই কি সবটা আমরা পারি?)৤ সেই একই শিশু কিন্তু ছয় মাস বা এক-বছর ইংরেজি পড়ে ‘সকল’ ইংরেজি শব্দ পড়তে পারে৤ কেন এই ব্যত্যয় তা আমাদের চিন্তার উদ্রেক করুক৤ সারা বিশ্বে ইংরেজি তথা রোমান হরফ ভীষণভাবে আদৃত৤ কেন সমাদৃত? তার কারণ রোমান হরফের গঠন এবং ব্যবহারবিধি খুবই সরল৤

          আর অন্য একটি ভাষাগত কারণও আছে তা হল, ইংরেজি এ্যালফাবেট(Alphabet) বা বর্ণমালা প্রকৃত এ্যালফাবেটিক চরিত্রের, বাংলা বর্ণমালা সেমি-এ্যালফাবেটিক(Semi-Alphabetic)৤ এর সুবিধা যেমন আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে৤ সেটা বাদ দিলেও বাংলায় পর পর হরফ বসিয়ে কখনও ‘সব কিছু’ লেখা যাবে না৤ মা, বাবা, কাকা, বচন, সরল, অবসর-- ধরনের কিছু স্তর অবধি তার বিস্তার, এর পরেই নানা জটিল সমাবেশে বাংলা লেখা বিব্রত৤ চিন দেশে নাকি তার জটিল হরফ তথা শব্দ যিনি যত বেশি জানবেন তিনি ততো শিক্ষিত লোক বলে গণ্য হবেন, বাংলার অবস্থাও খানিকটা তা-ই৤ —এ, —ও, জ্ঞ, ক্ষ, ষ৏ ইত্যাকার জটিল হরফ সমাবেশ মনে না রাখতে পারলে বাংলা লেখা যাবে না, বা পড়া যাবে না৤ বিদেশি কেউ, কিংবা স্বদেশেও অন্য প্রদেশের কেউ বাংলা শিখতে এসে হতাশ হন, এ কেমনতর ব্যবস্থা, ইচ্ছে থাকলেও শেখা কঠিন৤ এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে ওডিয়া শেখা নিয়ে, কিছুদূর ভালোভাবে এগিয়ে যেই যুক্তহরফের জটিল ধাঁধায় পড়লাম অমনি পাত্‌তাড়ি গোটাতে হল৤ বাংলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা অবশ্যই ঘটছে৤ আমরা কি সে জন্য কিছুমাত্র শোকাহত, দুঃখিত? বাংলাভাষায় বহিরাগতদের এই যে অনাপ্যায়ন, তা নিয়ে আমরা কতটা চিন্তিত?

          বাংলা লেখা নিয়ে এত যে মতান্তর তার মূল কারণটি রবীন্দ্রনাথের কথায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে __“একবার যেটা অভ্যাস হইয়া যায় সেটাতে আর নাড়া দিতে ইচ্ছা হয় না৤ কেননা স্বভাবের চেয়ে অভ্যাসের জোর বেশি৤...অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে একটা অহংকারের যোগ আছে৤ যেটা বরাবর করিয়া আসিয়াছি সেটার যে অন্যথা হইতে পারে এমন কথা শুনিলে রাগ হয়৤ মতের অনৈক্যে রাগারাগি হইবার প্রধান কারণই এই অহংকার৤”(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা শব্দতত্ত্ব)৤  

          একটা জিনিস মনে রাখা দরকার যে, রোমান হরফে পৃথিবীর নানা ভাষা লেখা হয়, তার মূল কারণ রোমান হরফ হল সরল (এবং সুন্দরও), তাই তা অপ্রতিরোধ্য৤ এমনকি এক সময়ে রোমান হরফে বাংলা লেখার বেশ চেষ্টাও হয়েছিল৤ সেই চেষ্টা টেঁকেনি, তার কারণ রোমান হরফ দিয়ে বাংলা সবটা লেখা যায় না, ঠিকভাবে লেখা যায় না৤ এমন অনেক জায়গাই আছে রোমান হরফে লিখলে যেখানে বোঝা খুব কঠিন হয়ে পড়ে৤ যেমন-- “অমল দাদাকে আমি আমল দেবো না, আমি আর অমিত দুটো ডাব খাবো”, এটা ইংরেজি তথা রোমান হরফে লিখতে গেলে সমস্যা হবে৤ প্রথমত “অমল” লিখলে তা ‘আমল’ নাকি ‘অমল’ তা স্পষ্ট হবে না, আর ‘আমি’ লিখলে তা ‘অমি’ও হতে পারে, দ্বিতীয়ত-- দাদা, দুটো, ডাব-- এসব কথা রোমান হরফে বোঝানো কঠিন(Amal dadake Ami Amal debo na, Ami Ar Amit duto dab Khabo)৤ 

        তাই ঠিকভাবে ধ্বনিসমূহ বোঝাতে হলে নানা চিহ্ন(ডায়াক্রিটিক্যাল মার্ক) ব্যবহার করতে হবে, যেমন রোমান হরফ দিয়েই ফরাসি লেখা হয়, কিন্তু আমরা তার বিবিধ চিহ্নের জাল এড়িয়ে তা পড়তে পারব না৤ যেমন ফরাসিতে “বসুন”=s'asseoir শব্দটির উচ্চারণ শুনেও বোঝা কঠিন৤ অনেকটা ‘সে-স সুয়া’ ধরনের(গুগুল ট্রানস্লেটর থেকে)৤ ফরাসিতে বানান দেখে শব্দের উচ্চারণ বোঝা কঠিন৤

         যদি ডায়াক্রিটিক্যাল মার্ক ব্যবহার করতেই হয়, তবে বাংলা হরফ ব্যবহারই শ্রেয়৤ এই হরফের সঙ্গে আমাদের আজন্ম পরিচয়৤ তাই বাস্তব ব্যাপারটাও দেখতে হবে৤ সেজন্য শুধু সুন্দর হলে হবে না, তার ভাষিক প্রয়োগ নৈপুণ্যও বিবেচ্য৤ তাই বরং রোমান হরফের কায়দায় বাংলা হরফ পাশাপাশি বসিয়ে যদি লেখা যায়, তবে সেটা করতে বাধা কী? তবে তা যে একশ’ ভাগই যে রোমান হরফের কায়দায় লিখতে হবে তা নয়, যতটা করা যায় তা দেখতে হবে৤ অন্তত হরফের মণ্ড, বা হরফের দলা-দলা ব্যাপারটা ছাড়াতে হবে৤ লেখার মাঝে ডেলা পাকিয়ে পাকিয়ে হরফের পুঁটুলি গুঁজে রাখা এখনও কি চালিয়ে যেতে হবে? আধুনিক এই আইটি(IT)-র যুগেও?




♥♥
===========

ঋণ:
বিভিন্ন আকর গ্রন্থ, সাধারণ গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট ও ব্লগ থেকে নানাভাবে প্রভূত সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে৤ তাঁদের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই৤

মনোজকুমার দ. গিরিশ
মণীশ পার্ক, কোলকাতা, ভারত 



পরবর্তী দ্বিতীয় অংশ দেখুন:

http://banglainternational.blogspot.in/2015/03/blog-post_9.html




সংশোধন, সম্পাদন, সংযোজন চলছে
সর্বশেষ পরিমার্জন ২৬/০৫/২০১৬






লেবেলসমূহ:

0টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এতে সদস্যতা মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন [Atom]

<< হোম