সোমবার, ৯ মার্চ, ২০১৫

বাংলা লিখনের আজন্ম দুর্দশা ঘুচুক --২য়



বাংলা লিখনের আজন্ম দুর্দশা ঘুচুক(৭টির) -২য়





বাংলা লিখনের আজন্ম দুর্দশা ঘুচুক(৭টির) -২য়







লেখাটি অহনলিপি-বাংলা১৪(AhanLipi-Bangla14) ফন্টে পড়তে হবে, নচেৎ লেখাটির বক্তব্য স্পষ্ট হবে না৤ ফন্ট ডাউনলোড



অহনলিপি-বাংলা১৪(AhanLipi-Bangla14) ফন্ট প্যাকেজ ডাউনলোড লিংক:
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip

অথবা লিংক পেতে দেখুন





সঙ্গে দেওয়া ফাইল দেখে নিতে হবে৤

অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default text font setting)
Default text font setting ডিফল্ট টেক্সট ফন্ট সেটিং

এবং



অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default Internet setting)

(Default font setting ডিফল্ট ফন্ট সেটিং)

on internet(Mozilla Firefox)
(top left) Tools  
              Options--contents
              Fonts and Colors
              Default font:=AhanLipi-Bangla14
                        Advanced...
                                    Fonts for: =Bengali
                                    Proportional = Sans Serif,   Size=20
                                    Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Sans Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Monospace=AhanLipi-Bangla14,  Size=20
                                    -- OK
            Languages
            Choose your preferred Language for displaying pages
            Choose
            Languages in order of preference
            Bengali[bn]
            -- OK
 -- OK

          এবারে ইন্টারনেট খুললে ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’ ফন্টে সকলকিছু দেখা যাবে৤ নেটে এই ফন্টে সব কিছু লেখাও যাবে৤







বাংলা লিখনের আজন্ম দুর্দশা ঘুচুক-২
          মনোজকুমার দ. গিরিশ
          মণীশ পার্ক, কোলকাতা


দ্বিতীয় অংশ



    যুক্তধ্বনির জন্য যুক্তবর্ণ(Consonant cluster) তিন উপায়ে হতে পারে 

(১)মণ্ডহরফ পদ্ধতি, 
(২)বর্ণসমবায় পদ্ধতি, 
(৩)বর্ণসমাবেশ পদ্ধতি৤

          (১)মণ্ডহরফ পদ্ধতি-- যেমন করে সাধারণভাবে যুক্তধ্বনির জন্য বাংলা যুক্তবর্ণ লেখা হয়৤ অর্থাৎ দলাপাকিয়ে হরফের উপরে হরফ চাপিয়ে, সম্পর্কিত যোজ্য হরফের অংশ নিয়ে গঠিত, যা যোজিত হরফগুলি থেকে ভিন্নতর গঠনের অবয়বে নির্মিত এক-একটি গঠন, যেমন-- স্টপ, স্কুল, ক্লাব 
কিংবা ক্ষ, জ্ঞ বাংলায় প্রচলিত পদ্ধতিতে যুক্তধ্বনির জন্য এমনি যুক্তবর্ণ লেখা হয়৤ 

          (২)বর্ণসমবায় পদ্ধতি-- যুক্তধ্বনির সম্পর্কিত যোজিত হরফগুলি পাশাপাশি বসবে, লঘু উচ্চারিত বর্ণটির অবয়ব হবে লঘু বা ছোটো৤ যেমন-- স্টপ, স্কুল, ক্লাব 


টপ  কুল  লাব

 
  বাংলায় দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্টে যুক্তধ্বনির জন্য এমনি সরল করে যুক্তবর্ণ লেখা হয়৤  

          (৩)বর্ণসমাবেশ পদ্ধতি-- যুক্তধ্বনির সম্পর্কিত যোজিত হরফগুলি পাশাপাশি বসবে, সকল হরফই যথাযথ আয়তনের এবং অবয়বের হবে৤ যেমন-- stop, school, club ইংরেজিতে এমনিভাবে যুক্তধ্বনির জন্য যুক্তবর্ণ গঠিত হয়৤ এই বর্ণসমাবেশ পদ্ধতিকে ঠিক Consonant cluster বলা চলে না৤


ইংরেজির মতো একই কায়দা অনুসরণ করে যদি বাংলায় নতুন প্রবর্তিত ‘যুক্তবর্ণ ব্যবস্থায়’ লেখা হয়, তবে কিন্তু ইংরেজি হরফ-ব্যবস্থার চেয়ে তা আরও ভালোভাবে লেখা যাবে৤ যেমন, যদি ইংরেজিতে stop, school, club লিখি তবে বাংলাতে সেটাই অনেক বেশি ভালোভাবে লেখা যাবে-- স্টপ, স্কুল, ক্লাব৤ এতে ভালোটা কী হল? স্টপ লিখতে ‘স্ট’-এর ছোটো -এর উচ্চারণ হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়৤ লেখার হরফে সেটা প্রতিফলিত(ছোটো হরফ তাই উচ্চারণও লঘু বা অল্পমাত্রার)৤ আবার স্কুল-এ ‘স্ক’-এ -এর উচ্চারণ এবারও হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়, লেখার হরফে এবারও সেটা প্রতিফলিত, ক্লাব লেখায় তেমনি ‘ক্ল’-তে -এর উচ্চারণ হচ্ছে লঘু বা অল্প মাত্রায়, লেখার হরফে সেটাও প্রতিফলিত৤ ইংরেজিতে কিন্তু সেটা হয় না৤ ইংরেজিতে সকল হরফ সকল সময়েই পূর্ণ অবয়বে লেখা হয়৤ তাই ইংরেজিতে যুক্তবর্ণ তথা যুক্তধ্বনির উচ্চারণের সঙ্গে লিখনের সাযুজ্য কম থাকে৤ ইংরেজিতে কোনও বর্ণের উচ্চারণ লঘু হলেও হরফ কিন্তু সেই পূর্ণ অবয়বেরই থাকে৤ বাংলায় সেটা না হয়ে, লঘু উচ্চারিত ধ্বনির বর্ণ/হরফ-- লঘু তথা ছোটো হয়, তাই বাংলা যুক্তবর্ণের নতুন লিখন পদ্ধতি ইংরেজির চেয়ে যুক্তধ্বনি লেখার ক্ষেত্রে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য হয়েছে৤ 

          বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ(Consonant) উচ্চারণ সহজ, কারণ প্রতিটি ব্যঞ্জনের সঙ্গে ‘অ’ ধ্বনির বর্ণটি অদৃশ্যভাবে লিপ্ত থাকে (inherent - সহজাত), নয়তো ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ কঠিন৤ বাংলায় এই লিপ্তি
(inherence/involvement - অধিষ্ঠান) অপসারিত হয় যখন তা যুক্তবর্ণে একীভূত হয়, যেমন-- স্ট, স্ক, ক্ল৤ অর্থাৎ বাংলা বর্ণমালা সেমি এ্যালফাবেটিক চরিত্রের  হয়েও তা নতুন উপায়ে যুক্তবর্ণ গঠনে-- লিপ্ত ‘অ’ বিয়োজন ব্যাপারটি স্পষ্ট করে তোলে৤ কিন্তু ইংরেজিতে তা ঘটে না৤ ইংরেজি হরফ সেখানেও যথাযথ পূর্ণ অবয়বের থাকে, কারণ ইংরেজি হল পূর্ণ এ্যালফাবেটিক চরিত্রের বর্ণমালা, তাই ইংরেজিতে বর্ণের সঙ্গে ‘অ’ ধ্বনি যোজনা তথা ‘অ’-লিপ্তি (inherence/involvement - অধিষ্ঠান) ব্যাপারটি নেই৤ যদিও ইংরেজির মতো পূর্ণ এ্যালফাবেটিক চরিত্রের বর্ণমালাই কিন্তু উন্নত বর্ণমালা৤ 

          আমরা অভ্যস্ত বলে যে বিকৃতি, অনাচার, অসহায়তা বাংলা লেখার মধ্যে চলে তা একজন বিদেশি যে চোখে দেখেন, তাঁর সেই দৃষ্টিতে সেটা দেখতে হবে৤ তখন দেখা যাবে এর ভিতরে সত্যিই কি অসহায় অবস্থা বিরাজ করছে৤ “কি” লেখা হয় ক-এর আগে ই-কার চিহ্ন দিয়ে৤ তাই বিদেশিদের প্রশ্ন এটা তখন “ইক” হবে না কেন? কারণ লেখা তো হচ্ছে, ই-কার(ি) এবং তার পরে ‘ক’(ি‌ক)৤ তাহলে শব্দটি ‘ইক’ হওয়াই তো যুক্তিসংগত৤

        যদি বলা হয় এটি চিহ্ন হিসেবে বসছে তাই তার উচ্চারণ ‘ইক’ না হয়ে সম্মিলিত হয়ে “কি” হবে৤ তবে একটা ভালো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়৤ বিদেশিদের তো সেসব বোঝাতে হবে৤ একটা হরফ-- হঠাৎ করে চিহ্ন হয়ে অন্য হরফের পিছনে বসে সম্মিলিত ধ্বনি তৈরি করবে, এটা অবঙ্গভাষী বিদেশিদের কাছে অদ্ভুত লাগে৤ তা লাগুক তার জন্য তো আমাদের বৈশিষ্ট্য আমরা বাদ দেব না! তবে একটা প্রশ্নও এসে যায়, ই-কার(ি) হরফের আগে, আর ঈ-কার(ী) হরফের পরে বসবে৤ কিন্তু চিহ্নদের অবস্থান আগে-পরে যা-ই হোক সাথী চিহ্নের উচ্চারণ কিন্তু সব সময়ে সঙ্গী বর্ণের পরে হয়৤ স্বরবর্ণের চিহ্ন বসে হরফে আগে, পরে, নিচে, দুপাশ ঘিরে৤ আর ব্যঞ্জনচিহ্ন তথা ফলা সঙ্গী বর্ণের বাকি দিকটি তথা উপরেও বসতে পারে-- র্ক, র্ত, র্ব, অর্জুন৤ অর্থাৎ হরফ নানা চিহ্নের ঘেরাটোপে চারিদিক থেকে ঢাকা থাকে৤এক-একটা হরফ সঙ্গী চিহ্নদের ঘাড়ে পিঠে মাথায় বুকে বয়ে বেড়ায়৤


          যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রে একটা হরফের ঘাড়ে আর একটা হরফ কেমন বেমানান, বিসদৃশ৤ অন্যভাষার ক্ষেত্রে যদি এমনটা হয় তবে সেটা আমাদের সহজেই চোখে পড়ে (ইংরেজিতে যেমন-- æ, œ Æ, Œ, & ),  নিজেদের বাংলা হরফে আমরা অভ্যস্ত বলে বাংলা হরফের দুরবস্থা আমাদের চোখে পড়ে না৤ চোখে পড়াবার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে৤ তিনটে চারটে হরফ বা তার অংশ জুড়ে দলা পাকানো দেখতেই আমরা অভ্যস্ত৤ তাই একটু নতুন ভিন্ন চোখে দেখতে হবে৤ তখন বাংলা লেখার বিকৃতি চোখে পড়বেই৤ সেই কোন্‌ প্রাচীন দিনে মানুষ হরফের উপরে হরফ না চাপালে তাদের ধ্বনি সংযুক্তি বুঝতে পারত না৤ আমরা বোধহয় এখনও তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি৤


       আমরা সেই মজাদার গল্পটির কথা মনে করি৤ ‘গ’ ‘ল’ আর ‘প’ তিন বন্ধু পথে যেতে যেতে ‘ল’ হাঁটতে পারছে না, তাই ‘প’ তাকে পিঠে নিল৤ তখন সেটা হয়ে গেল 
সেই অশক্ত বন্ধু এখনও ঘাড়ে চেপে চলেছে৤ বাংলার পঙ্গুত্ব কবে, কীভাবে ঘুচবে?


          এখানে ল+প =ল্প দুরকমভাবে গঠিত, চালু ফন্টেই দুরকম ভাবে সন্নিবিষ্ট৤  


        এমনিতেই শত শত যুক্তবর্ণের জটিল জালে জড়িয়ে বাংলা মুদ্রণ হাঁসফাঁস করছে, তার উপরে এক-একটির রূপ আবার একাধিক হলে যুক্তবর্ণের দলার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়৤ বাংলা মুদ্রণ যে কত অসহায় তারই উদাহরণ এসব৤


          বাংলা ভাষার মাধুর্য নিয়ে বিদেশিরা অনেক ভালো কথা বলেছেন যেটা শুধু শ্লাঘ্য নয়, যেটা আমাদের নিজেদেরও চোখ খুলে দেবে৤ রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়ে উল্লেখ করে জে.ডি. এন্ডারসন, ডি.লিট, আই সি এস, বঙ্গীয় তথা ঢাকা সাহিত্য-পরিষদের সদস্য, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাভাষার অধ্যাপক ১৯২০-তে বলেছেন--'সামগ্রিক বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি ও মাধুর্যের বিচারে এ এক বিলম্বিত ... স্বীকৃতি৤... মানবিকতা, কারুণ্য ও সরসতাগুণে এ-সাহিত্যের গরিমার কথা মানতেই হয়, মানতে হয় এর লক্ষণীয় বৈচিত্র, নম্য রীতিকলা এবং গদ্য-পদ্য নির্বিশেষে প্রকাশশৈলীর বহুমুখী ঐশ্বর্য ...৤ পাশ্চাত্য সাহিত্যর অনুবাদ-বাহন হিসেবেও সমস্ত ভারতীয় ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠতা অবশ্যস্বীকার্য৤' 

          খ্যাত জাপানি 'বাংলাভাষী' (প্রয়াত)কাজুও আজুমা বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন উপলক্ষে বাংলা আকাদেমি সভাকক্ষে, ৩০-১২-১৯৯৯ তারিখে বলেছেন, "আমি পৃথিবীর কয়েকটি ভাষা শিখেছি৤ বাংলাভাষা সবচেয়ে সুন্দর ও মধুর মনে করি৤ বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি, বাংলাভাষা তার ভাবপ্রকাশের উপযুক্ত ভাষা৤" তাঁর বাংলা বলার উচ্চারণ প্রায় বাঙালির মতোই৤ এটা বিদেশিদের পক্ষে অতীব কঠিন ব্যাপার৤ আমরা যেমন যতই ইংরেজি জানিনা কেন উচ্চারণে তা এক প্রকার বাংলাই! 

 কাজুও আজুমা 
(প্রয়াত)


          Times of India(Apr 22, 2010) বলেছে, ...is to be believed, Bengali has been voted the sweetest language in the world.

          বাংলা হরফ যে সুন্দর তা বিদেশিরা বলেছেন৤ একজন জানিয়েছেন যে, বিদেশে বাংলাভাষা শিক্ষার্থী এক তরুণ কেন বাংলা শিখতে এলেন, তার জবাবে সেই তরুণ জানান যে, বাংলা হরফের সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হয়ে বাংলা শিখতে এসেছেন৤ 

        কিন্তু বাংলা ‘লেখার’ ব্যবস্থা ‘সুন্দর’ একথা তাঁদের কারও মনে হয়েছে কি? তাঁরা বরং এর সংশোধন চেয়েছেন৤ সেটা বহুদিন আগেই, কিন্তু আমরা নড়ে বসিনি৤ সেটা আমাদের অযোগ্যতা, নাকি আলস্য জনিত ব্যাপক অনুশীলনের ভীতি, নাকি অন্য কিছু তা কে জানে? তবে পৃষ্ঠপোষণের যে অভাব এবং অনীহা আছে তা স্পষ্ট হয়েছে৤ একজন উজ্জ্বল তরুণ বাংলাভাষা গবেষক তাঁর গবেষণার পূর্ণ সাফল্যের পরে আরও উন্নত গবেষণার জন্য সামান্য অর্থও সরকারি অনুদান হিসেবে চেয়ে পাননি৤ তিনি ভয়ানক হতাশ হয়ে সেই দুঃখে তাঁর গবেষণার সেই অভিমুখ প্রায় পরিত্যাগ করলেন৤তাঁর বন্ধুরাও দেখেছি খুবই ক্ষুব্ধ৤

          বাংলাভাষীদের এক দেখনদারি আছে যা বাংলাভাষার প্রসার, প্রচার ও বিকাশে বাধা হয়ে আছে৤ বাঙলিরা ‘বাংলা’ বলতে ভাবের আবেগে ‘অজ্ঞান’৤ আ মরি বাংলা ভাষা!  কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে বাংলা প্রয়োগে ততোটা তৎপর নয়৤ একজন বিদেশি দেখলে তো বটেই, এমনকি একজন ভারতীয় অবাঙালিকে দেখলেও তার সঙ্গে বাঙালিরা কখনও বাংলা বলে না৤ তার বিবিধ কারণ থাকতে পারে, যেমন-- 

(১)বাঙালি খুব সহানুভূতি প্রবণ, তাই ‘দয়া করে’ অবঙ্গীয়দের সঙ্গে সেই অবঙ্গীয়ের ভাষাতেই কথা বলে, অবশ্য ‘অবঙ্গীয়ের ভাষা’ মানে কিন্তু তা হিন্দি, তিনি দক্ষিণ ভারতীয় হলেও, যাঁরা কিনা আবার সম্পূর্ণভাবে হিন্দি বিরোধী! 

(২)সাহসের অভাব৤ ভাবনা-- যদি বহিরাগত ব্যক্তিটি বাংলা না জানে তবে কি হবে? অবশ্য সেই বহিরাগত হয়তো এখানে এ বঙ্গে ৩০ বছর ধরে আছেন৤ 

(৩)বাহাদুরি দেখানো যে-- দেখ হে, আমি কেমন তোমার ভাষা জানি! আমার ভাষা বলার তোমার কি সেই এলেম আছে? 

(৪)ভাষা নিয়ে এত অদেখলেপনায় কাজ কি, ভাষা একটা বললেই হল, ইত্যাদি ইত্যাদি৤

          ভাষা হল জীবন ও জীবিকার মূল হাতিয়ার, তাকে হেলা করা চলে না৤ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা সেটাই করে৤ নিজের ভাষা নিয়ে এত অসচেতন অংশ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর কোথাও আছে কি? অথচ “আ মরি বাংলা ভাষা!” তার এক নিয়মিত মুখবাদ্যি৻ 
          এক-এক জায়গায়, ঢাকায়, আসামের শিলচরে বাংলার জন্য হচ্ছে অকাতরে প্রাণ দান, আর অন্যত্র কোলকাতায় সেই বাংলাই হচ্ছে খান খান! সেই অন্যদের ধিক, বললেও অধিক হয় না৤

           ১৯৩৫-এ আনন্দবাজার পত্রিকায় লাইনো টাইপ চালু হয়৤ তার পিছনে যাঁদের নাম খ্যাত হয়ে আছে তাঁরা নমস্য৤ কিন্তু আরও দু-একটি নাম শোনা যায় যাঁরাও ছিলেন এর প্রকৃত হোতা৤ তাঁদের চিন্তাভাবনা এর পিছনে কাজ করেছে৤ যদিও তাঁরা খ্যাতির আলোয় আসেননি৤ এব্যাপারে তথ্যের জন্য “বর্ণপরিচয়” পত্রিকাটি দেখা যেতে পারে(বর্ণপরিচয়, নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০০৯, পৃঃ ২৩১-৩৬, বাংলা টাইপ ও কেস, অজরচন্দ্র সরকার)৤ সেখানে একটি কথা খুব গুরত্বপূর্ণ--‘পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করিতে গিয়া আমাকে পুনঃ পুনঃ বলিতে হইয়াছিল যে, বাঙ্গালা বানান ঠিক না হইলে বাঙ্গালা টাইপ ও কেসের সংস্কার হইতেই পারে না৤’ 
          গত শতকের আশির দশকে যখন সবে ডেস্কটপ কম্পিউটার বাজারে এসেছে, তখন তাতে কেবল ইংরেজিতে লেখা যেত৤ তখন যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক গবেষক(সমর ভট্টাচার্য) কম্পিউটারে বাংলা লেখার জন্য তার গবেষণা শুরু করেন অধ্যাপক ডঃ তপন ঘোষালের অধীনে৤ 
 ডঃ তপন ঘোষাল

সমরবাবু সফল হয়ে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন৤ 






সমর ভট্টাচার্য(বর্তমান চেহারা)



সেটাই কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখার ব্যবস্থা৤ 


        অবশ্য অন্য মতও আছে একটি তথ্য জানাচ্ছে যে ‘পলাশ বরন পাল’ কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখার ব্যবস্থা করেন৤ অন্য একটি মত আছে যে বাংলাদেশে  বিজয়খ্যাত মোস্তাফা জব্বার কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লেখার ব্যবস্থা করেন ('বিজয়' নামে তিনি নিয়ে আসেন প্রথম বাংলা ইনপুট সফটওয়্যার। ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে এই বিজয়।)৤ 

         তবে সমরবাবুর কাছে দুটি লেখা আমি দিয়েছিলাম তা কম্পিউটারে লেখা যায় কিনা তা দেখতে৤ তিনি কম্পিউটারে তার [গ্রাফিক ?] ডিজাইন করে দেখান৤ লেখা দুটি হল -- “বই পড়ুন” (২৫.০৯.১৯৮২), এবং “অম্বা”(১৫.০৬.১৯৮৫)৤ প্রথম লেখাটি আমি কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে ফটো তুলে রাখি, পরের লেখাটি তিনি লাইনপ্রিন্টারে প্রিন্ট করে দেন৤ ডঃ তপন ঘোষাল ও সমরবাবুর শেখানো পরামর্শ মতো আমি দ্বিতীয় লেখাটির হেক্সাডেসিমাল প্লটিং করে দিই, তাঁদের কাজের সুবিধার জন্য৤ 

          লেখাটি হল -- “বই পড়ুন”(২৫.০৯.১৯৮২)   
  
       
   লেখাটি কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে ক্যামেরায় আমার তোলা ফোটো৤  


 এবং 



“অম্বা”(১৫.০৬.১৯৮৫)    
          

 
          এই লেখাটি কম্পিউটার লাইন-প্রিন্টারে প্রিন্ট করা৤ 




          যতদূর মনে হচ্ছে গবেষক সমর ভট্টাচার্যই প্রথম বাংলা কম্পিউটার ফন্ট তৈরি করেন৤  


         যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যাপক ডঃ পবিত্র সরকার, ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২, আমাকে 

এক চিঠিতে লিখেছেন --  





 ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ডঃ তপন ঘোষাল হলেন গবেষক সমর ভট্টাচার্যের রিসার্চ গাইড৤


          ডঃ ফিয়োনা জি ই রস লিখিত The Printed Bengali Character and its Evolution বইখানিতে বাংলা ছাপার হরফের যে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে তার দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, তিনি নিজে লাইনো টাইপের কাল থেকে বাংলা হরফ নির্মিতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত৤ তারপরে যখন বাংলায় ডিজিটাল টাইপিং এলো স্বাভাবিকভাবে তাঁর ভূমিকা প্রধান হবে একথা অবিসম্বাদিত৤

          বাংলায় ডিটিপি প্রথম চালু হয় “আজকাল”-এ৤ এর পর-পরেই আনন্দবাজার পত্রিকায়ও বাংলায় ডিটিপি চালু হয়৤ যদিও কে প্রথম তা নিয়ে দ্বিমত আছে৤  

          বাংলায় প্রথম পিটিএস(ফটো টাইপ সেটিং) ব্যবস্থা চালু হয় “আজকাল” দৈনিক সংবাদপত্রে তার প্রকাশ সূচনা থেকেই ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের, ২৫ মার্চ৤ দেবব্রত ঘোষ তার ফন্ট ডিজাইনার৤ “আজকাল” পুরো পত্রিকাই পিটিএস(ফটো টাইপ সেটিং)-এ ছাপা শুরু করে৤ যদিও আনন্দবাজার পত্রিকা দাবি করে তারা ১৯৭৯/৮০ থেকে পিটিএস(ফটো টাইপ সেটিং) চালু করেছে৤ তবে আনন্দবাজারে ‘বাংলা’ পিটিএস শুরু হয় ১৯৮০-এর শেষের দিকে বলে তারা নিজেরা জানিয়েছে (২৮জুলাই ১৯৯৩)৤ আনন্দবাজারে ফন্ট নির্মাণে সহায়তা করেছেন মিস ফিয়োনা রস৤ পরে ফিয়োনা রস বিবাহবদ্ধ হন Rod Hollom-এর সঙ্গে, বর্তমানে তাঁর Charlie এবং Jed নামে দুটি পুত্র সন্তানও আছে৤

  

          আনন্দবাজারের ফন্ট নির্মাণে আর একজনের নামও শোনা যায়৤ তিনি দুলাল সরকার৤ তিনি প্রচারের আলোয় আসেননি৤ যাঁর যেখানে যেটুকু ভূমিকা তা আমাদের স্মরণ করা উচিত৤ ইতিহাসের ব্যাপারে বাঙালিরা বড়ই উদাসীন৤ বাংলার জলমাটির মতোই তা খুব নরম এবং অস্থায়ী৤

          আনন্দবাজার পত্রিকার ট্যাবলয়েড সংস্করণ “এবেলা”-র ফন্টও নির্মাণ করেছেন ফিয়োনা রস (released on 31 August 2012)৤

          স্কটিশ, জন মারডক(John Murdoch) ছিলেন এ বঙ্গের একজন পাদরি৤ তিনি বিদ্যাসাগরকে বাংলা ছাপার ব্যাপার নিয়ে ‎১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে একটি চিঠি লেখেন৤ বিদ্যাসাগরের “বর্ণপরিচয়” প্রকাশের(১৮৫৫) দশ বছর পরে (বর্ণপরিচয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত একটি বাংলা বর্ণশিক্ষার প্রাইমারি বা প্রাথমিক পুস্তিকা। দুই ভাগে প্রকাশিত এই পুস্তিকাটির দুটি ভাগই প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৫ সালে।--উইকিপিডিয়া)৤ চিঠিতে মারডক বাংলা লেখা সরল করার জন্য আবেদন জানান৤ তিনি অবশ্য জানতেন যে, এইভাবে সরল করে লেখার আবেদন কাজে লাগবে না৤ হয়েছেও ঠিক তাই৤ এব্যাপারে কোনও উদ্যোগ বা প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি৤ মারডক জানতেন যে সহজে তেমন কিছু হবে না, তাই তিনি লেখেন যে এই প্রস্তাব আজ হয়তো উপহাস করে(ridicule ) উড়িয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু ভবিষ্যতে একদিন বাংলা লেখা সরল করতেই হবে৤ সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা৤ বস্তুত আজকের বাস্তব এই যে, সে দিকেই বাংলা ছাপা ক্রমে এগোচ্ছে৤ তার অগ্রগতি অতি শ্লথ হতে পারে তবে তা রুদ্ধ নয়৤ বাংলা লেখা একদিন সরল হবেই৤ নানা কারণে তা দ্রুত হচ্ছে না, কিন্তু ধীরে হলেও তা একদিন হবেই৤









 





ঢাকা 









ঢাকা



  






পথসংকেত 


বাংলা ফন্ট সফ্‌টওয়্যার করার আগে আমার করা বাংলা হরফের ড্রইং












আমার করা ‘বাংলা ইঞ্জিনিয়ারিং বর্ণমালা’ দিয়ে লেখা ধারক বাক্য(প্যানগ্রাম[Pangram="every letter")৤ 

প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় এই বাক্যটি আমারই তৈরি করা, আগে ছিল না৤




♥♥
==========
ঋণ:
বিভিন্ন আকর গ্রন্থ, সাধারণ গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট ও ব্লগ থেকে নানাভাবে প্রভূত সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে৤ তাঁদের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই৤ 

মনোজকুমার দ. গিরিশ
মণীশ পার্ক, কোলকাতা, ভারত




পরবর্তী তৃতীয় অংশ দেখুন:

http://banglainternational.blogspot.in/2015/03/blog-post_32.html





সংশোধন, সম্পাদন, সংযোজন চলছে
সর্বশেষ পরিমার্জন ২৬/০৫/২০১৬






লেবেলসমূহ:

0টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এতে সদস্যতা মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন [Atom]

<< হোম