বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৪

বাংলাভাষা সংস্কার Bangla Bhasha Sanskar দ্বিতীয় অংশ

 

বাংলাভাষা সংস্কার Bangla Bhasha Sanskar 

দ্বিতীয় অংশ[মোট ৪টি অংশ]


লেখাটি অহনলিপি-বাংলা১৪ AhanLipi-Bangla14 ফন্টেই পড়তে হবে 

ফন্ট প্যাকেজ ফ্রি ডাউনলোড লিংক: 

https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip

কিংবা 

https://sites.google.com/site/ahanlipi/


বাংলা ইন্টারন্যাশনাল ব্লগে প্রকাশিত

পূর্বে প্রকাশিত নিবন্ধটি সর্বাধুনিক অহনলিপি-বাংলা১৪ইউনিকোড ফন্টে পুনর্লিখিত হল(মার্চ ২০১৪)
(Recomposed in "AhanLipi-Bangla14"  Unicode font)

বাংলাভাষা সংস্কার
মনোজকুমার দ. গিরিশ
(মনোজকুমার দীনেশচন্দ্র গিরিশ)

মোট ৮৪ পৃষ্ঠা 
(৪-এর দ্বিতীয় অংশ -- পৃঃ ৩৩--৫৩)

৩৩

        এত ক্ষণের আলোচনায় কিছু হয়তো বোঝা গেল৤ আমরা চাই আধুনিক যুগে, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গীতে বাংলা ভাষা এবং বানানকে সম্পূর্ণ যুগোপযোগী করতে৤ যা এই মহাকাশ ও কম্পিউটারের  e-যুগেও বাংলা ভাষাকে আগের মতোই ধরে রাখবে সবার শীর্ষে৤ বাংলাভাষা সবাইকে পথ দেখাবে৤ ভারতে এবং এশিয়াতে তো বটেই ইউরোপের বাইরে বাংলাভাষাই সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়েছে৤ এভাবেই সে এগিয়ে থাক সব সময়ে, এটাই বাংলাভাষা এবং বানান সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য৤ 

        বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় মহাশয় বাংলাভাষা নিয়ে যে দুর্মর আশা প্রকাশ করেছিলেন তা শ্রদ্ধায় স্মরণ করা যাক৤ তিনি বলেছেন, --“যদি এমনভাবে বঙ্গভাষার সম্পদ বৃদ্ধি করা যায় যে, সম্পূর্ণরূপে মানুষ হইতে হইলে অপরাপর ভাষার ন্যায় বঙ্গভাষাও শিখিতে হয়, এবং না শিখিলে অনেক অবশ্যজ্ঞাতব্য বিষয় চিরকালের মত অজ্ঞাত থাকিয়া যায় ও অন্য শত ভাষা শিক্ষা করিয়াও পুরা মানুষ হওয়া না যায়, তবেই বঙ্গভাষা জগতে চিরস্থায়িনী হইবে; বাঙ্গলার ভাষা জগতের অন্যান্য প্রধানতম ভাষার শ্রেণীতে সমুন্নীত হইবে৤ অন্যথা বঙ্গের তথা বঙ্গভাষার গৌরব বাড়িল কৈ? বঙ্গসাহিত্য বলিলেই যাহাতে একটা বিরাট সাহিত্য বুঝায়, বিশ্বের অন্যতম প্রধান সাহিত্য বুঝায়, এমনভাবে বঙ্গসাহিত্যের গঠন করিতে হইবে৤” (রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাবার আগে লেখা)৤ 

        বাংলাভাষার দেহে আছে হাতির অসীম বল, কারণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষা সংস্কৃত থেকে সে তার বর্ণমালা গ্রহণ করেছে, আর সেখান থেকেই পেয়েছে প্রকাশভঙ্গীর অতুল ঐশ্বর্য৤ ইংরেজি ভাষার সংস্পর্শে বাংলাভাষার বৈভব আরও অনেক বেড়েছে, বাংলা গদ্যসাহিত্যের বিকাশ হয়েছে ইংরেজদের হাতে, ইংরেজদের হাতেই
মুদ্রণব্যবস্থার মাধ্যমে হয়েছে তার বিরাট কারিগরি (technical) অগ্রগতি৤ সাম্প্রতিক বাংলা কম্পিউটার সফ্‌টওয়্যার তৈরির মাধ্যমে সে পেয়েছে পথ চলার অতি আধুনিক যুগের উপযোগী দুর্বার ইন্ধন৤ এবার যদি বাংলা ভাষার বানান ও লিখনপদ্ধতি সংস্কার করে তাকে চিতাবাঘের চিকন(sleek) গতি দেওয়া যায়, তবে বাংলাভাষা তার অবস্থান সবার শীর্ষে যথাযথ স্থানে বজায় রাখতে পারবে৤ অন্যথায় হয়তো তা সম্ভব হবে না৤ বাংলা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষাক’টির একটি, ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে যদি তার বিপুল শব্দভাণ্ডার(বাংলায় আছে প্রায় দেড় লক্ষ শব্দ) আরও আরও সমৃদ্ধ হয়, তবে এই প্রস্তাবিত আমূলসংস্কার তাকে নিঃসন্দেহে যোগাবে আরও অনেক শক্তি৤ 


৩৪

        প্রয়োগের দিক থেকে ও ব্যবহারিক দিক থেকে বাংলা সংখ্যাগুলি শ্রেষ্ঠ৤ ইংরেজি সংখ্যার 1(১) এবং l(এল); i, I(আই)-- 1lI(১, এল, আই), পরস্পর এতই সাদৃশ্যমূলক যে, এদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা অনেক সময়েই কঠিন৤ আবার শূন্য(0) এবং  Oo(‘ও’ বড়হাত, এবং ছোটোহাত) খুবই সাদৃশ্যমূলক(Oo0)৤ কম্পিউটারে সংখ্যা (শূন্য 0) এবং ‘ও’(o) লেখার পার্থক্য বোঝাবার জন্য কম্পিউটার স্ক্রিনে অনেক সময়েই পেট কেটে শূন্য লেখা দেখা যায়৤ সংখ্যা 6 এবং 9 যদি আলাদাভাবে কাগজে বা কার্ডে লিখে মিলিয়ে দেওয়া হয়, তবে এর কোন্‌টা কোন্‌ সংখ্যা তা বোঝা যাবে না৤ কারণ 6 উলটে দিলে তা স্বাভাবিকভাবে 9 বলে মনে হবে৤ আবার উলটোভাবে 9-কে 6 মনে হবে৤

        ক্ষুদ্রাকারে লেখা হলে সংখ্যা 3 এবং 8 এর মধ্যে তফাত বোঝা কঠিন৤ সংখ্যা 7 এবং 9 এর মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করতে, হাতে করে লেখার সময়ে, সংখ্যা 7 এর পেট কেটে লেখার রীতি আছে৤ লক্ষ করলে দেখা যাবে গাড়ির নাম্বারপ্লেটে ছোটো এবং বড় হাতের i I(আই) এবং o O(‘ও’), হরফদুটি ব্যবহার করা হয় না৤ সংখ্যা 1(১) এবং 0(শূন্য ০) 1Il oO0 হরফগুলি পাশাপাশি লিখলে, সংখ্যা এবং হরফ মিলে মিশে গুলিয়ে যাবে৤ 

        আর নাগরি সংখ্যা? তা যে তেমন সুবিধেজনক নয়, তার পরোক্ষ স্বীকৃতি বোধ হয় আছে ভারতের সংবিধানে, সেখানে হিন্দি লেখার সঙ্গে ইংরেজি সংখ্যা ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৤ 
 343. Official Language of the Union. --  
(1) The Official Language of the Union shall be Hindi in Devanagari Script.
     The form of numerals to be used for the official purpose of the Union shall be the international form of Indian numerals.

        তবে ইংরেজি সংখ্যাগুলির গঠন সরল৤ যদিও তা অ-সমপ্রস্থ বিশিষ্ট৤ যা কোন কোন ক্ষেত্রে বেশ দৃষ্টিকটু মনে হয়৤ যেমন, যদি লেখা যায়-- 8118881188, বা এই ধরনের কোনও সংখ্যা৤ ডিজিটাল ক্যালকুলেটরে লিখলে এটা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে৤ অবশ্য ইংরেজি হরফের ডিজিটাল গঠন অনেক সহজ৤ বাংলায় ডিজিটাল হরফ নেই, অর্থাৎ ছিল না, এখন তৈরি করা হয়েছে৤ যদিও তা স্বাভাবাবিক ভাবেই ইংরেজি সংখ্যার চেয়ে কিছুটা জটিল৤ কারণ, বাংলাসংখ্যার গঠনে ভাঁজ বেশি৤ যদিও তা বেশ সহজে ব্যবহার করা যায়৤ যেমন--
 
কিন্তু বাংলা সংখ্যাগুলি ইংরেজি সংখ্যার মতো অ-সম প্রস্থবিশিষ্ট নয় বলে সংখ্যার সারি দেখতে ইংরেজি সংখ্যার চেয়ে বেশ ভালো৤ যেমন--  

  
       বাংলা সংখ্যা চার ৪, এবং ইংরেজি সংখ্যা আট 8, দেখতে হুবহু একই রকম হলেও এদের মধ্যে গঠনগত পার্থক্য আছে৤ বাংলা সংখ্যা চার ৪, দক্ষিণাবর্তী, অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘোরে সেই দিক বরাবর এর লেখা এগোয়৤ আর ইংরেজি সংখ্যা আট 8 বামাবর্তী, অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এর গঠন-গতি৤ সঙ্গের ছবিটি দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে৤ 






পূর্ববর্তী কালে অবশ্য বাংলা সংখ্যা চার ৪, বামাবর্তী করে লেখার চলও ছিল৤




৩৫

        আগে বাংলা স্বরবর্ণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, এবারে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক৤ 

        বাংলা বর্ণমালায় আছে ৪০টি ব্যঞ্জনবর্ণ৤ এদের সবকটি যে বর্ণমালায় রাখা যাবে না, সেকথা আগেই বলা হয়েছে৤ বাংলা ৪০টি ব্যঞ্জন থেকে ৫টি বর্ণ বাতিল হবে৤ (বাংলা স্বরবর্ণ থেকেও পাঁচটি স্বরবর্ণ বাতিল হয়েছে-- ঈ ঊ ঋ ঐ ঔ)৤ বাতিল পাঁচটি ব্যঞ্জনবর্ণ হল -- ঞ, ণ, য, (অন্তঃস্থ)ব[ৱ], ষ৤ লেখায় এসব হরফ আমরা ব্যবহার করি বটে, কিন্তু কার্যত এসব হরফ বাংলা বর্ণমালায় নেই৤ বানানের অভ্যাসবশে লিখি, কিন্তু তা প্রাণহীন লিপি, বা ছবি মাত্র, উচ্চারিত বর্ণলিপি নয়৤   

        এসব বর্ণ বিবর্ণ বর্ণ৤ উচ্চারণকালে আমরা এসব বিবর্ণ বর্ণের উচ্চারণ না করে মূল বর্ণগুলির ধ্বনিই উচ্চারণ করি, এবং মনেকরি যে এসব বিবর্ণ বর্ণের উচ্চারণই বুঝি করছি৤ যেমন, বাঙালি মুর্ধন্য-ষ উচ্চারণই করতে পারে না৤ কিন্তু লেখার বানানে তা রাখা চাই-ই, নইলে বানান ভুল বলে গণ্য হয়৤ কিন্তু বর্ণটির উচ্চারণ যে করতে পারি না, বা উচ্চারণ যে করি না, সে ব্যাপারে আমরা মুখ বুজে থাকি, চোখ বুজে থাকি৤ তখন কি কোনও দোষ হয় না? সে প্রশ্নের জবাব কে দেবে? এখানে সবাই নিরুত্তর৤ 

        আসলে বর্ণমালায় এসব বিকল্প বর্ণ রেখে দিয়ে আমরা বর্ণমালার ভার বাড়িয়ে রেখেছি৤ এতে ধার বাড়েনি, বরং ভার(বোঝা) বেড়েছে, এবং ধার কমেছে৤ এবার সময় হয়েছে সে অকারণ ভার দূর করার৤ অকারণ বোঝা দূর করতে পারলে বাংলা ভাষার চলার গতি স্বচ্ছন্দ, সরল এবং দ্রুত হবে৤ কিন্তু এতগুলো বর্ণ (স্বরবর্ণ ৫ + ব্যঞ্জনবর্ণ ৫=মোট ১০টি) বর্জন করার কথা ভেবে মনে মনে হয়তো অনেকেই খুব আহত হবেন, ভয় পাবেন খুব৤ ভাষার এত গভীর মূল্যবান সম্পদ বর্জন করতে তাঁদের মন কিছুতেই সায় দেবে না৤ তাঁদের আশ্বস্ত করে বলতে হয় যে, এ্যাপেন্​ডিকস্​ অপারেশন করা যখন খুব জরুরি হয়ে পড়ে, তখন তাতে লোকসান কিছু নেই, এতে বরং জীবন রক্ষা হয়৤ এসব বিকল্প বর্ণ বজায় থাকায় বানান লিখতে গিয়ে আমরা হিমসিম খাই, কোন্‌টা যে সঠিক বানান, আর কোন্‌টা ভুল তা নির্ধারণ করাই কঠিন৤ ভুলের এসব মূল্যহীন বিলাসে কী লাভ? মূল্যহীন জিনিস নিয়ে ফোতো কাপ্তেনি যদি করি, তাতে আমার কি কিছু লাভ হবে? বাংলা বানানে এই যে ভুল হবার বিদ্যমান অবস্থা, তা মেনে নেওয়া হয়েছে বলেই পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি বের করেছেন-- আকাদেমি বানান অভিধান৤ এরকম বানান অভিধান আরও একাধিক আছে, যেমন অরুণ সেন কৃত বানানের অভিধান৤ মাহবুবুল হক-এর বাংলা বানানের নিয়ম৤ 

        এছাড়া, আমরা দেখেছি নানা ধরনের অভিধান, যেমন, সাধারণ অভিধান -- হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস৤ মহা অভিধান -- (জাতীয় অভিধান)-- সম্পাদক, জগন্নাথ চক্রবর্তী(খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশমান এই বাংলা অভিধানখানি বিশ্বে অতুলনীয়), উচ্চারণ অভিধান -- নরেন বিশ্বাস, ধীরানন্দ ঠাকুর, থিসরাস--যথাশব্দ(মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান), সমার্থশব্দকোষ (অশোক মুখোপাধ্যায়), শব্দসাধ অভিধান -- (বচন ও প্রবচন-- মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান [বাংলাদেশ], এধরনের একটি অভিধান অন্য কোনও ভাষায় আছে কিনা সন্দেহ৤  

        এছাড়া, শব্দসন্ধান অভিধান-- পি. আচার্য, বিবিধার্থ অভিধান-- সুধীরচন্দ্র সরকার, ব্যাকরণ অভিধান-- অশোক মুখোপাধ্যায়, সাহিত্য অভিধান-- সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ভিদ অভিধান-- অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ, ইতিহাস অভিধান-- নারায়ণচন্দ্র চন্দ্র ও সুনীল ভট্টাচার্য, চিকিৎসা অভিধান-- ডাঃ নির্মল সরকার, চাল-চলন অভিধান-- কুমারেশ ঘোষ(ছোটোদের জন্য লেখা হলেও, ছোটো বড় সকলেরই অবশ্যপাঠ্য!), ইত্যাদি ছাড়াও আরও অনেক এধরনের অভিধান প্রায় সব ভাষাতেই আছে, কিন্তু এককভাবে বানান-অভিধান বোধহয় কেবলমাত্র বাংলাতেই আছে! এটা অবশ্যই বাংলা ভাষাভাষীদের পক্ষে খুব গৌরবের নয়৤ অর্থাৎ বাংলা বানান সংস্কার করে, তা সহজ সরল করার ব্যাপারে আমরা কত যে অনীহ, সোজা কথায়, কত যে আলস্যযুক্ত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৤ 


৩৬

        অরুণ সেন বলেছেন(বানানের অভিধান বাংলা বানান ও বিকল্প বর্জন একটি প্রস্তাব -- অরুণ সেন, প্রতিক্ষণ, কোলকাতা, ডিসেম্বর, ১৯৯৩), “বাংলা ভাষায় লেখালেখি, পড়া ও পড়ানো, বই বা পত্রপত্রিকার সম্পাদনা ও প্রকাশনা কিংবা প্রুফ-দেখার কাজ, ইত্যাদিতে যাদের জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে, তাদের বহু মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি অন্তত এই: বাংলা বানান নিয়ে যথেচ্ছাচার কত রকমের এবং কত গভীর হতে পারে তা চাক্ষুষ করা৤ ... অনেকেই মনে করে, ‘বাংলা বানান তো সব রকমই হয়৤’(পৃঃ-১৭)৤ পৃথিবীর সব ভাষাতেই মৌলিক এবং আগন্তুক ভাষার মিশ্রণ ঘটেছে৤ কিন্তু বাংলা ভাষার ইতিহাসে যেভাবে ঘটেছে তা অন্যত্র বোধহয় তুলনীয় নয়৤ তাই এখানে বানানের যে জটিলতা তা এই ইতিহাসের কারণেই এবং তা এই ভাষার নিজস্ব৤ এর সমাধানও হবে এই নিজস্বতাকে মেনে নিয়ে(পৃঃ-১৯)৤ সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের বানানে যে রক্ষণশীলতা তা কিন্তু চিরকালের৤ সেই ভাষার বহু চিহ্নই অনেকাংশে তাদের অর্থ হারিয়ে ফেলেছে ঠিকই, সংস্কৃত চর্চাও প্রায় বিলুপ্তির পথে, তবু তৎসম শব্দের চেহারা সেই চিহ্নসহ এমন গেঁথে আছে লোকস্মৃতিতে যে তাকে 'বৈজ্ঞানিক' বুদ্ধিতে লোপ করার চেষ্টা করলে বাঙালির মনোজগতের শৃঙ্খলাকেই ব্যাহত করা হবে৤ বাংলা ভাষার তৎসম শব্দের এই 'অবৈজ্ঞানিক' বানানই এখন বাঙালির সংস্কৃতির অঙ্গ (পৃঃ-১৯)৤ যে-শব্দকে কোনো অভিধানে তৎসম বলা হয়েছে, সেই শব্দকেই হয়তো অন্য অভিধানে তদ্ভব বা এমনকী কখনো বিদেশী বলে গণ্য করা হয়েছে৤” (পৃঃ-৫২)৤ 

        বাংলা বানানের ব্যাপারে আমরা কত যে উদাসীন তা সহজেই বোঝা যায়৤ একটি ইংরেজি শব্দের বানান ঠিক না হলে আমাদের মান যায়, কিন্তু একটি বাংলা বানান ঠিক না হলে আমরা তেমনভাবে উদ্বিগ্ন হই না৤ না-হবার একটা কারণ হল এই যে, শব্দটির সঠিক বানান কী হবে তা অনেক সময়ে আলোচনা করেও ঠিক করা যায় না৤ তাছাড়া, এক-এক অভিধানে শব্দের বানান এক-এক রকম৤ কোনও অভিধানের বানান লিখেই নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, এই শব্দের এই বানানটিই ঠিক৤ প্রত্যেক অভিধানের যেন নিজস্ব বানান-ঘরানা আছে৤ প্রতিটি সংবাদপত্র তার নিজস্ব বানান-রীতি অনুযায়ী চলে৤ এমনকি প্রত্যেক পণ্ডিত ব্যক্তিরই বোধহয় এক-একটি নিজস্ব বানান-ঘরানা বা বানান-অভিধান আছে৤ আমার মতো নিকষ অ-পণ্ডিত ব্যক্তিরও যে বানান-ঘরানা নেই, একথাও হলফ করে বলা যায় না! এ বড় দুর্ঘট ব্যাপার৤ তবে, আমার সে পাঠশালার আমিই একমাত্র ছাত্র, আর আমিই তার শিক্ষক! 

        বাংলা বানানের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হল, তৎসম শব্দের বিশেষ নিয়ম, আর বাকি সব শব্দের অন্য নিয়ম! অরুণ সেনের অভিযোগ মারাত্মক-- ‘যে-শব্দকে কোনো অভিধানে তৎসম বলা হয়েছে, সেই শব্দকেই হয়তো অন্য অভিধানে তদ্ভব বা এমনকী কখনো বিদেশী বলে গণ্য করা হয়েছে৤’ 

        একথাই শুরুতে বলছিলাম যে, আমরা প্রত্যেকেই যেন এক-একটি বানান-অভিধান৤ অন্তত যারা কিছুটা লেখাপড়া জানি, এবং বানান “জানি” বলে মনে মনে কিছুটা শ্লাঘা অনুভব করি৤ সকলেই প্রায় মনে মনে নিজস্ব বানান-অভিধান পোষণ করি৤ কিন্তু কখনওই প্রায় ভাবি না যে বাংলা বানান কেন এত অনিয়ত? কেন বাংলা বানান “বাংলা” হবে না৤ জানি কেউ কেউ মুখিয়ে আছেন এই বলতে যে, ইংরেজিতে তো শব্দের উচ্চারণ আর বানানে অনেক তফাত, ফরাসিতে অবস্থা নাকি আরও খারাপ, তাহলে বাংলায় তা হতে দোষ কি? হ্যাঁ, দোষ এটাই যে, ইংরেজিতে যদি কোনও একটা বিকৃত ব্যবস্থা থেকে থাকে তো আমাদের ব্যবস্থাটাও তেমনি করে রাখায় দোষ নেই-- এই ভ্রান্ত মনোভাব পোষণ করতে আমাদের তেমন দ্বিধা নেই৤ কোরিয়ার ভাষার কথা আগেই বলেছি, তাঁরা যা করেছেন তার সিকিভাগ করতেও আমাদের বুকে বল পাব না৤ 

৩৭


        এ ব্যাপারে সংস্কৃতের দিকে কি তাকাতে পারি না, যে-সংস্কৃতকে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলার জননী  বলেও মনে করি৤ যদিও সংস্কৃতভাষা বাংলাভাষার জননী নয়৤ কিন্তু সংস্কৃতের সঙ্গে আমাদের বাংলাভাষা এত ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে সংস্কৃতকে বাদ দিয়ে কোনও কথা প্রায় ভাবাই যায় না৤ কিন্তু শব্দের উচ্চারণ এবং তার বানানে যে মিল থাকতেই হবে, সে ব্যাপারে সংস্কৃতের দিকে তাকাতে আমরা ভুলে যাই৤ উচ্চারণটাই যে বানান সে কথা ভুলে বসে থাকি, নয়তো বানান কী? উচ্চারণ করব ‘কাক’ আর লিখব ‘বায়স’, এ কেমন কথা? যদিও কাজের বেলায় আমরা সে কথা ভুলে যাই, এ বড় মধুর ভুল!  

        পাণিনির সময়ে তৎকালীন ভাষার মধ্যে বলা এবং লেখায় ব্যাপক পার্থক্য ঘটে, তাই তিনি সেই প্রচলিত ভাষাটি লিখবার নির্দেশিকা তৈরি করেন৤ সেটাই হল পাণিনীয় অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণ-নির্দেশ৤ সেখানে কিন্তু উচ্চারণ অনুসারে লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৤ (ভাষাটির নাম ছিল ‘বৈদিক ভাষা’ তথা বেদের ভাষা৤ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় বলেছেন, আমি কিন্তু সংস্কৃতকে বাংলার অতি-অতি-অতি-অতি-অতি-অতিবৃদ্ধপ্রপিতামহী বলি৤ পাণিনির সময় সংস্কৃতকে ভাষা বলিত অর্থাৎ পাণিনি যে ব্যাকরণ লেখেন, তখন তাঁহার দেশে লোকে সংস্কৃতে কথাবার্তা কহিত৤ তাঁহার সময় আর-এক ভাষা ছিল, তাহার নাম ‘ছন্দস্’-- অর্থাৎ বেদের ভাষা৤ বেদের ভাষাটা তখন পুরানো, প্রায় উঠিয়া গিয়াছে৤ সংস্কৃত ভাষা চলিতেছে৤ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ --পৃঃ-৩৬৭)

   Astadhyai fixed the   form of Sanskrit, the ‘Perfect’ language, for all time. This work is usally known as a grammar, but it would be more precise to call it a doctrine of verbal expression. -- The New Caxton Encyclopedia –  p91, vol.15, 1979 Edn.  

        এই সংস্কারের পরে সেই কথ্য ভাষাটির নাম হয় “সংস্কৃত” ভাষা, অর্থাৎ সংস্কার-কৃত-- সংস্কার করা ভাষা৤ এমনকি সংস্কৃতকে অবধি “সংস্কার” করা যায় বাংলাভাষা এবং বানান সংস্কারে বেলাতে কেন এত বাধা?
 

         সংস্কৃতকে আমরা জননী মানি, কিন্তু তার যে মূল নীতি তা বেমালুম ভুলে বসে থাকি৤ এই ভুলে থাকাটা, ইচ্ছে করে ভুলে থাকা৤ নইলে বাংলা বানান নিয়ে নতুন করে যে অনেক খাটাখাটনি বেড়ে যায়৤ নতুন বানানটা শিখতে হয়৤ অবশ্য উচ্চারণমূলক করে লিখলে বানান আর তেমন করে শেখার ব্যাপার নেই৤ আসল ব্যাপারটা হল, সংস্কৃত বানান আর বাংলা বানান দু-রকম হয়ে যাবে যে! সেটা হলে সংস্কৃত বানান-জানা লোকদের বাংলা বানান নিয়ে অনেক বেশি মাথা ঘামাতে হবে৤ আর সেটা করতে তাঁরা নিতান্ত অনিচ্ছুক৤ তাই পুরানো সংস্কৃত ভাষার-- পুরানো বানান, বাংলার উপরে চাপিয়ে তাঁরা বেশ নিশ্চিন্ত এবং সুখে আছেন৤ অথচ এই যুগে সংস্কৃত ভাষার বস্তুত কোনও আর্থিক মূল্যই প্রায় নেই৤ এই কম্পিউটারের e-যুগেও আমরা সংস্কৃতের জুতোয় পা রেখে হাঁটি হাঁটি পা-পা করব? 



 ৩৮

        একটা দেখা ঘটনার কথা বলি, নতুন হরফে নতুন বানানে লেখা ধারক বাক্যটি পড়তে বয়স্ক লোকেরা যত হিমসিম খান, অল্প বয়স্ক কিশোর তরুণ নবীনেরা ঠিক ততো সহজে তা পড়ে ফেলে৤ কারণ তাদের তো বানান নিয়ে কোনও প্রাক-সংস্কার, বা বানান নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো নেই৤ তাই তারা পড়ে ফেলে চটপট, আটকায় না কোথাও৤ 

        এখানে প্রশ্ন এই যে, সংস্কৃত ভাষার বানান লেখা হয় কোন্‌ রীতি-নীতি মেনে? অবশ্যই তা উচ্চারণকে অনুসরণ করে৤ বাংলা বানানের ক্ষেত্রে তা কেন মানা হয় না, বা মানা হবে না? তার জবাব কী? জবাব হয়তো এই যে, আমরা লেখার সময়ে ক-টা সংস্কৃত শব্দ লিখি? প্রতি দিনে একটাও কি সংস্কৃত শব্দ লিখি? বোধ হয় লিখি না৤ আর যা বলি? তার একটাও সংস্কৃত শব্দ নয়! আমরা বাংলার মধ্যে অঢেল সংস্কৃত শব্দ আমদানি করি ঠিকই, কিন্তু মোটেই তা সংস্কৃত লেখার জন্য নয়৤ বাংলার মধ্যে আমরা সংস্কৃত শব্দ তো আকছারই লিখি কিন্তু তা কি সংস্কৃত লেখার জন্য লিখি, নাকি বাংলায় সেসকল শব্দ আমদানি করি? সংস্কৃত শব্দ(ডলার?) বাংলায় আমদানি করার সঙ্গে সঙ্গেই তো তা বাংলা(টাকা?) হয়ে যায়৤ নইলে বাংলা উচ্চারণে ইংরেজি শব্দ table, glass-- টেবিল(tebil), গেলাস(gelas), লেখা যেত? সংস্কৃত ‘বৃষ্টি’ কি আমরা “বিষ্টি” বলি না? বলার সময়ে বলি, ‘আয় বিষ্টি ঝেঁপে’ লেখার সময়েও তাই লিখি ‘আয় বিষ্টি ঝেঁপে’৤ তাই লেখার ক্ষেত্রবিশেষে বিষ্টি লিখলে তা কি দোষাবহ হয়? হয় না যে, সে কথাটা কি আমরা ইচ্ছে করে ভুলে থাকব? আমদানি করা শব্দ(loan words) কি আমরা, আমাদের শর্ত অনুযায়ী ব্যবহার করার অধিকারী নই? তেমন শর্তেই কি আমরা “বৈদেশিক বাণিজ্য” করছি? আমরা কি স্বভাষায় তেমন স্বাধীন নই? আমরা কি তেমন ভাবে, বা তেমন শর্তে সংস্কৃত ঋণশব্দ আমদানি করি? তা হলে তো বাংলাভাষা কোনও কালেই আর বাংলা হয়ে উঠবে না৤ তেমন অবস্থা কি চলতে দেওয়া হবে? চিরকালই চলতে দেওয়া হবে? চিরকাল? মূল প্রশ্ন এটাই৤ 

        পাঠককে অনুরোধ করব, নিজের মতো করে ভাবনা চিন্তা করে, একটি সৎ মতামত প্রকাশ করতে৤ অন্যের মতে প্রভাবিত না হয়ে নিজের মতো করে কিছু ভাবুন, দেখবেন যে, বাংলা বানানকে ‘বাংলা’ করাই আপনার চূড়ান্ত মতামত হয়ে দাঁড়াবে৤ ব্যাকরণে আমরা প্রধানত সংস্কৃত ভাষাকে অনুসরণ করি, এবং কিছুটা ইংরেজি ব্যাকরণকেও অনুসরণ করি, খাঁটি বাংলা ব্যাকরণ এখনও অবধি তৈরি হল না৤ বানানে আমরা সংস্কৃত, ইংরেজি বা অন্য কিছুকে অনুসরণ করতে পিছুপা নই৤ বাংলা তাহলে বাংলা হবে কবে, বাংলা হবে কেমন করে? এই প্রশ্নের উত্তর দেবার দায়িত্ব আপনার পাঠক, আপনার৤ 

        রবীন্দ্রনাথ অন্য এক প্রসঙ্গে বলেছেন-- “... তখনকার দিনে বঙ্গ সাহিত্য যদি উৎকর্ষ লাভ না করত তবে আজকে হয়তো তার প্রতি মমতা ছেড়ে দিয়ে আমরা নির্বিকার চিত্তে কোনো একটি সাধারণ ভাষা গ্রহণ করে বসতাম”, রবীন্দ্র-রচনাবলী(সুলভ সংস্করণ), খণ্ড ১২, পৃঃ-৪৯৮(জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০/১৯২৩, বিশ্বভারতী)৤ সংস্কৃতের দিকে তাকালে কি মনে হয়না যে, আমরা সেটা প্রায় করেই বসে আছি! সংস্কৃত ভাষা সংস্কৃতই তা বাংলা নয়৤ তাহলে তো এযুগের শ্রেষ্ঠ ভাষা ইংরেজিকে বাংলার বদলে গ্রহণ করতে পারতাম, আর তা করতে পারলে আমাদের তো রমরমা অনেক বেড়ে যেত৤ কিন্তু সত্যিই কি তা হত? হত না৤ তাহলে ইংরেজ আমলে বসেই মধুসূদন আবার বাংলায় ফিরে আসতেন না, বঙ্কিমচন্দ্র ইংরেজি সাহিত্যের দিকপাল হতেন৤ বিভাষায় উৎকর্ষ লাভ করেন কোটিতে গুটিক, অনেকে নন, সবাই তো ননই! মাতৃভাষার কোনও বিকল্প নেই৤ মাতৃভাষার দক্ষতা অন্য ভাষায় কখনওই লাভ করা যায় না, অন্য ভাষায় মাতৃভাষার মতো সুক্ষ্মতা লাভ করা তো আকাশ কল্পনা৤ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, আমরা যেমন মাতৃক্রোড়ে জন্মেছি তেমনি মাতৃভাষার ক্রোড়ে আমাদের জন্ম, এই উভয় জননীই আমাদের পক্ষে সজীব ও অপরিহার্য৤ 

৩৯

        ব্যঞ্জনবর্ণ থেকে পাঁচটি(৫) বর্ণ(এগুলি বস্তুত আমরা ব্যবহার করি না) বাতিল হল, 
যেমন-- ঞণ,  (অন্তঃস্থ)-য,  (অন্তঃস্থ)-ব,    

        এই পাঁচটি বর্ণ বাতিল হবার পরে বাংলা বর্ণমালায় থাকবে মোট ৩৫টি ব্যঞ্জনবর্ণ৤ এগুলি হল--
               
                *
                *
               
               
        *      * 
        *       
               
       
বাতিল বর্ণগুলির বিকল্প কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করা যাক -- 

        স্বরবর্ণের মতো এখানে নতুন কোনও ব্যঞ্জনবর্ণ নির্মাণ ও গ্রহণের প্রস্তাব আপাতত নেই৤ 

তাই সংস্কারের পরে বাংলা বর্ণমালায় মোট বর্ণ দাঁড়াবে-৭+৩৫=৪২টি৤ 

        অ/য়   ঙ/ং   ত/ৎ   শ/স --এই বর্ণগুলি আপাত বিকল্প৤ তবে এদের ব্যবহার হবে খুব নিয়ন্ত্রিত এবং সীমিত৤ তাই তা বাস্তবে তেমন বিকল্পের সমস্যা তৈরি করবে না৤ 

        অ/য়-- এখানে উচ্চারণে এদের মধ্যে মিল থাকলেও একটির পরিবর্তে অন্যটি বসবে না৤ শব্দ-মধ্যে মুক্ত অ(এবং মুক্ত আ) বসবে না, আর য় বর্ণটি শব্দের শুরুতে বসবে না৤ ফেব্রুয়ারি=ফেব্রুআরি হবে না৤ এান্ড=য়্যান্ড হবে না৤ ইউনিয়ন=য়ুনিয়ন হবে না৤ আবার ড্রইং =ড্রয়িং হবে না৤ য়(=অ) ধ্বনি কার্যত নিরপেক্ষ(Neutral) ধ্বনি হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাই এর প্রকৃতি অতি বিচিত্র৤ সেজন্য য়-এর ব্যবহারে সংযত হতে হতে হবে৤ প্রসঙ্গটি পৃথক্‌ভাবে
আলোচনার যোগ্য দীর্ঘ নিবন্ধ হতে পারে৤

        ঙ/ং -- স্বরাশ্রিত  হলে ঙ হবে, অন্যত্র ং (অনুস্বর/অনুস্বার) হবে৤ অনুস্বর ব্যবহার অনেক বেশি সপ্রতিভ (স্মার্ট Smart)৤ শংখ, সংঘ, বাংলা, সংগত৤ বাঙালি, আঙিনা, আঙুল, ফিঙে, ভাঙো৤ “ভাঙর, হাঙর” হবে(ভাংয়র, হাংয়র নয়), এখানে ঙ স্বরাশ্রিত(ভাঙর, হাঙর৤ অ=)৤ শার্ঙ্গদেব=শা৒ঙ্গদেব, কেবল এই একটিমাত্র শব্দে ছোটো (=ব্যঞ্জনচিহ্ন ) ব্যবহৃত হবে৤ ছোটো (=ব্যঞ্জনচিহ্ন  হিসাবে ) ব্যবহৃত হবার অন্য আর কোনও ক্ষেত্র নেই৤ 

        ত/ৎ -- হলন্ত উচ্চারণ হলে ৎ(খণ্ড ত) হবে, নচেৎ ত হবে৤
                মৎ সৎ৤ পাৎ ভাৎ মাৎ রাৎ সাৎ হাৎ৤
                কত নত মত যত আহত নিয়ত অবগত৤
        মৎ এবং মত শব্দদুটির পার্থক্য আরও স্পষ্ট করতে মত(মত৹)=মতো লেখা হবে৤ (যেমন সংখ্যা ৩৩ থেকে পার্থক্য আরও স্পষ্ট বোঝাতে ‘তত’ না লিখে ‘ততো’ লেখা ভালো৤ ৩৩তম, না লিখে লেখা উচিত ৩৩-তম)৤



৪০

        শ/স -- উচ্চারণ অনুসারে শ এবং স হবে৤ যুক্তবর্ণে স-এর অনেক ব্যবহার আছে, কিন্তু মুক্তবর্ণে স-এর ব্যবহার খুবই সীমিত৤ ইসলাম, বাস, ব্যাস, সাফ, সাফাই, সুফি, সেলাম, সেস ইত্যাদি মাত্রই কয়েকটি শব্দে মুক্ত ‘স’ ব্যবহৃত হয়৤ অথচ বাংলায় মুক্ত “স” দিয়ে শুরু শব্দের সংখ্যা সর্বাধিক প্রায় ৫৪০০টি(বাংলায় মোট শব্দ আছে ১,৫০,০০০ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার৤ সুতরাং ‘স’ ব্যবহার হল ৫,৪০০/১,৫০,০০০=৩.৬% শতাংশ)৤ কিন্তু যুক্তবর্ণে -বর্ণটির(S) ব্যবহার অবাধ, প্রায় সর্বত্রই স৤ এমনকি ‘শ্রী’ আসলে স্রি! 


     একটি নামী এবং মানী সংবাদপত্র তার সংবাদের উপ-শিরোনামে লিখল-- ‘প্রসংশা’ 

আবার সংবাদের ভিতরে লিখল “প্রশংসা”

শ এবং স নিয়ে যে আমাদের উচ্চারণভেদ নেই এবং এদুটি বর্ণ ব্যবহার করে কিছু লেখা হলে শ/স, যে লটারি করে লিখতে হয় এসব তারই উদাহরণ (আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, রবিবার ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, পৃঃ ১৪)৤ ভুল কারও নয়গো মা, আমরা স্বখাত সলিলে ডুবে মরি!



        ন/ঁ -- এই দুটি কিয়ৎপরিমাণে বিকল্পমুখী হলেও ব্যবহারিক সমস্যা নেই৤ 

        হ/ঃ -- এই দুটিও আংশিক বিকল্প৤ আঃ ওঃ নাঃ বাঃ যাঃ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাধারণভাবে                                            আহ্‌ ওহ্‌ নাহ্‌ বাহ্‌ যাহ্‌ হবে না৤
       যদিও এমনি বানানেও এসব লেখা চলতে পারে৤ 

                -- এই চারটি বর্ণই বিকল্প বর্ণ৤ এর মধ্যে ং    এই দুটি আশ্রয়স্থানভাগী বিকল্প বর্ণ৤ এই চারটি বিকল্পের কোনওটিই শব্দের শুরুতে বসবে না৤ 

     ৎসরু (ছুরির হাতল) সংস্কৃত শব্দ, এবং প্রয়াত বোঝাতে, যেমন-- (প্রয়াত বা ঈশ্বর বোঝাতে)    হল হিন্দুভিত্তিক(  ৺দীনেশচন্দ্র) ব্যতিক্রমী ব্যবহার৤ অবশ্য কিছু কিছু রুশ শব্দ বাংলায় লেখার জন্য ‘ৎ’ দিয়ে শুরু হতে দেখা যায়৤ ব্যতিক্রমী ব্যবহার নিয়ে খুব বেশি উদ্ব্যস্ত (উদ্‌ব্যস্ত) হবার দরকার নেই৤



        ব্যঞ্জনবর্ণের সজ্জা --
        ব্যঞ্জনবর্ণ এখন যে ক্রম-এ সজানো থাকে তা উচ্চারণ-স্থানের ক্রম অনুসরণ করে নতুন করে সাজানো হবে৤ বর্তমানের প্রচলিত ক্রম অনিশ্চিত৤ ভাষাতত্ত্ব আলোচনার গ্রন্থগুলি থেকে তা স্পষ্ট হয়৤ মুখস্ত করা হয় বলে বর্ণগুলি পরপর বলা সম্ভব৤ নতুন ক্রম হবে উচ্চারণ-স্থানের ধারাবাহিকতা অুসরণ করে৤

কণ্ঠনালীয়--
কোমলতালব্য--
ক খ গ ঘ ঙ
তালব্য--
দন্তমূলীয়-মূর্ধন্য ও অগ্রতালব্য--
ট ঠ ড ঢ ড় ঢ়
সম্মুখ জিহ্বাজাত তালুদন্তমূলীয়--
চ ছ জ ঝ শ
দন্তমূলীয়--
ন র ল স
দন্ত্য--
ত থ দ ধ
ওষ্ঠ্য--
প ফ ব ভ ম
এবং এরপরে অবশিষ্ট বিকল্প বর্ণসমূহ--
ঃ ং ঁ ৎ
(শেষোক্ত এই চারটি বিকল্প বর্ণের নির্দেশিত-অবস্থান হবে এমনিই পরপর সজ্জায়--  ঃ  ং  ঁ  ৎ )৤


         
         
৪১
                               
        এই রীতি মেনে উচ্চারণস্থানের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে সংস্কার-কৃত, ও পরিমর্জিত বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের নতুন সজ্জা হবে :--

পরিমার্জিত বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ--
ক খ গ ঘ ঙ
ট ঠ ড ঢ ড় ঢ়
চ ছ জ ঝ শ
ন র ল স
ত থ দ ধ
প ফ ব ভ ম
                      --- ৩৫টি মোট
       
        শেষের এই চারটি বর্ণ স্বভাবিকভাবেই পূর্ণ বর্ণ নয়৤ এর মধ্যে
         হলন্ত বিকল্প বর্ণ ২টি = ঃ 
আশ্রস্থানভাগী (বিকল্প বর্ণ) ২টি = ং   

        এই চারটি বিকল্প বর্ণ যে-মূল বর্ণসমূহের অনুগত তা নিচে দেখানো হল৤ বর্ণমালায় এদের সজ্জাও হবে প্রদর্শিত এমনি ক্রম অনুসরণ করে পর পর৤

        অনুগ-পরিবর্ত
        -----------------
     -- হলন্ত বিকল্প বর্ণ
    -- আশ্রয়স্থানভাগী হলন্ত বিকল্প বর্ণ
                      অনুনাসিক বা নাসিক্য 
       -- আশ্রয়স্থানভাগী বিকল্প বর্ণ        
                     অনুনাসিক বা নাসিক্য
      -- হলন্ত বিকল্প বর্ণ 

        সুতরাং, স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ মিলিয়ে মোট ১০টি বিকল্প বর্ণ বর্জন করে, এবং একটি নতুন স্বরবর্ণ তৈরি করে যা দাঁড়াল, তা হল-- 

        বাংলা বর্ণমালা: স্বরবর্ণ--৭, ব্যঞ্জনবর্ণ--৩৫
                        মোট-- ৭+৩৫=৪২
        এগুলির মধ্যে সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ হবে-- ঙ স ঃ ৎ এই চারটি বর্ণের৤
       
        বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণস্থান দেখলে কোন্‌ বর্ণের কোথায় অবস্থান তা বোঝা যাবে, এবং এর সজ্জা কেমন হবে তার হদিস পাওয়া যাবে৤ স্বরবর্ণের সজ্জা যেমন উচ্চারণস্থান অনুযায়ী হবে, ব্যঞ্জনবর্ণের সজ্জাও তেমনি উচ্চারণস্থান অনুযায়ী হবে৤ বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের বর্তমান যে সজ্জা তা অনিশ্চিত, এবং কেন যে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের এমনি সজ্জা তা স্পষ্ট নয়৤ তাই স্পষ্টতা আনতে এবং বর্ণের ক্রম নিশ্চিত করতে, বাংলা বর্ণের ক্রম হবে প্রদর্শিত পদ্ধতি মতো৤ এই ক্রম অনুসরণ করলে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের ক্রম অনুসরণ করা এবং মনে রাখা অনেক সহজ হবে৤ স্বরবর্ণের সজ্জা  শুরু যেমন কণ্ঠধ্বনি থেকে, ব্যঞ্জনবর্ণের সজ্জাও তেমনি কণ্ঠধ্বনি থেকেই শুরু হবে, আর শেষ হবে ওষ্ঠে এসে৤ 


 ৪২
নিচের চিত্রে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের অবস্থান দেখানো হয়েছে-- 
(১)কণ্ঠনালীয়(মহাপ্রাণ)
ক খ গ ঘ ঙ
(৩)কোমল-তালব্য(পশ্চাৎ-জিহ্বা জাত, কণ্ঠ্য[অল্পপ্রাণ/মহাপ্রাণ])
(৪)তালব্য(অল্পপ্রাণ)
ট ঠ ড ঢ ড় ঢ়
  (৫)দন্তমূলীয়-মূর্ধন্য, অগ্রতালব্য, মূর্ধন্য(অল্পপ্রাণ/মহাপ্রাণ)
চ ছ জ ঝ শ
(৬)(সম্মুখ-জিহ্বা জাত)তালু দন্তমূলীয়(অল্পপ্রাণ/মহাপ্রাণ)
ন র ল স
(৭)দন্তমূলীয়(অল্পপ্রাণ)
ত থ দ ধ
(৮)দন্ত্য(অল্পপ্রাণ/মহাপ্রাণ)
প ফ ব ভ ম
(৯)ওষ্ঠ্য(অল্পপ্রাণ/দন্তমূলীয়)
=হ
=ঙ
=ন
=ত


                   উচ্চারণ স্থানের চিত্র 





            

৪৩

১৤কণ্ঠমূল(Glottis)
২৤আলজিভ(Uvula)
তালু  ৩৤কোমল/নরম তালু(Soft palate, Velum)
         ৪৤মূর্ধা-- কঠিন তালুর পশ্চাৎ ভাগ(Cerebrum)
         ৫৤কঠিন/শক্ত তালু(Hard palate)
         ৬৤অগ্র তালু(Pre Palate)
৭৤দন্তমূল(Alveolus)
Lips ৮৤ওষ্ঠ(উপরের ঠোঁট)
         ৯৤অধর(নিচের ঠোঁট)
জিহ্বা ১০৤ জিহ্বামুখ(Apex)
          ১১৤অগ্রজিহ্বা(Front)
          ১২৤পশ্চাৎ জিহ্বা(Dorsum)
          ১৩৤জিহ্বামূল(Root)
১৪৤গলনালী[খাদ্যনালী](Gullet, Esophagus)
১৫৤কণ্ঠতন্ত্রী(Vocal Cords)
১৬৤স্বরযন্ত্র(Larynx)

কণ্ঠস্বর ধ্বনির কম্পাঙ্কের পাল্লা  ৩০০~৩৪০০(সাঃ/সেঃ) চক্র আবর্তন প্রতি সেকেন্ডে
Voice Frequency Range   300 ~ 3400 c/s(cycles per second.) voice-frequency spectrum 300-3400 Hz.






নিচে দেখানো হল বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের 
 উচ্চারণস্থান অনুযায়ী অবস্থান-ছক৤



৪৪

বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ-- উচ্চারণস্থান অনুযায়ী অবস্থান-ছক 








এবার বাংলা নতুন বর্ণমালা নতুন হরফে দেখা যাক --
     স্বরবর্ণ -- অ                    এা   
স্বরবর্ণ চিহ্ন -- ৹                          ৙঄   

স্বরবর্ণ
এা
স্বরচিহ্ন
 ৹
৙঄
প্রয়োগ
কা
কী
কু
ক৙
ক৙঄
কৗ
                 


৪৫





স্বরবর্ণের নতুন সজ্জা--          এা    =৭



ব্যঞ্জনবর্ণ--

       

        *

        *

       

       

*      * 

*       

             =৩৫



ব্যঞ্জনবর্ণের নতুন সজ্জা-- 


       


         

       

       

       

       

              ঃ          ৩৫টি




        নতুন ব্যঞ্জনচিহ্নগুলি হবে সাধারণ হরফই, তবে আয়তনে তা একটু ছোটো৤ কেবল য়-এর চিহ্ন খানিকটা পৃথক, অনেকটা য-ফলা ‍্য-চিহ্নের মতোই তলায় বিন্দু যোগ করে (য়=৖) অন্য কোনও বর্ণেই আর কোনও ব্যতিক্রম নেই৤




        যুক্তবর্ণ সংগঠন--

        বাংলায় মোট যুক্তবর্ণ আছে প্রায় ৫২৩(সর্বমোট ৬০৭), এর অন্তত ৩৯৫টি বিশুদ্ধ যুক্তবর্ণ, এবং “যুক্তধ্বনি” -- ৫৭টি৤  বিভিন্ন গ্রন্থ, অভিধান, সংবাদপত্র, ছাপাখানার টাইপসাঁট ইত্যাদি অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা করে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা গেছে৤ উন্নততর অনুসন্ধান ও বৃত্তিগত গবেষণায় এ সংখ্যার অবশ্যই হেরফের হতে পারে৤ 


        বাংলায় যুক্তবর্ণ লেখার পদ্ধতি খুবই অ-বৈজ্ঞানিক৤ দুটো বা তিনটে হরফ মিলিয়ে যখন যুক্তবর্ণ লেখা হয়, তখন তাতে প্রকৃত পক্ষে এক-একটি নতুন হরফ তৈরি হয়৤ তাই প্রতিটিকে আলাদা করে লিখতে, এবং চিনতে হয়৤ ইংরেজিতে যুক্তবর্ণ নেই তাই সেসব আলাদা করে চেনার দরকারও নেই৤ 


       বাংলায় যুক্তবর্ণ যেন হরফ-মণ্ড৤ নানা হরফ নিয়ে কিংবা তার কর্তিত অংশ নিয়ে দলা পাকিয়ে সংশ্লিষ্ট হরফগুলি থেকে দেখতে নতুন এক হরফমণ্ড তৈরি করা হয়৤ সব ভারতীয় ভাষাতেই বোধহয় এই একই রীতি চালু আছে৤ কারণ আধুনিক ভারতীয় লিপির বেশিরভাগই ব্রাহ্মী লিপি থেকে উদ্ভূত৤ ব্রাহ্মীতেও হরফের উপরে হরফ চাপিয়ে যুক্তবর্ণ তৈরি হত--







৪৬


        তাই মণ্ড-হরফ ব্যবস্থা ভারতীয় তথা বাংলা লিপির একটি উত্তরাধিকার৤ পূর্বাঞ্চলীয় ‘কুটিল’ লিপি থেকে যার উদ্ভব৤ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, খোদিত প্রাচীন মিশরীয় চিত্রলিপিতেও হরফের উপরে হরফ বসিয়ে যুক্তবর্ণ লেখা দেখা যায়(সেখানে যেমন 
সিংহের ছবি 

এঁকে বোঝানো হত ‘ল’ বা L ধ্বনি, 

এবং ‘ক’ বোঝানো হত
ত্রিভুজ আকৃতির একটি ছবি এঁকে

যেমন-- 

ক্ল KL   


ইংরেজিতেও যেমন আছে-- Æ =AE, æ = ae, Œ = OE, œ = oe ইত্যাদি ধরনের যুগ্ম হরফ গঠন৤  
         

         প্রাচীন দিনে মানুষ হরফের উপরে হরফ না চাপালে তাদের ধ্বনি-সংযুক্তি অনুভব করতে পারত না৤ তাই যুক্তধ্বনি বোঝাবার জন্য হরফের উপরে হরফ চাপিয়ে যুক্তহরফ বা যুক্তবর্ণ/যুক্তব্যঞ্জন তৈরি করা হত৤ পরবর্তীকালে মানুষের মেধা যখন বিমূর্ত চেতনাকে ধারণ করতে শিখল তখন হরফ পাশাপাশি বসিয়ে যুক্তবর্ণ তৈরি করতে আরম্ভ করে, এবং এই ধরনের যুক্তবর্ণ থেকেই তারা যুক্তধ্বনি অনুভব করতে শেখে৤ ইংরেজিতে যুক্তধ্বনি বোঝাবার জন্য প্রাচীন দিনের সেই হরফের উপর হরফ চাপানোর অপ্রত্যক্ষ স্মৃতি এখনও খানিকটা রয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের বাংলায় রয়ে গেছে সে সবের প্রায় পুরোটাই৤ বাংলা যুক্তবর্ণের এই স্তিমিত-গতিসম্পন্ন মণ্ডহরফ ব্যবস্থার অবসান হওয়া দরকার৤ তাই দেখা যাক বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ কোথা থেকে কীভাবে হয়েছে, সে সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক কিছুটা আলোচনা করে৤ 






৪৭



        বাংলায়  যুক্তবর্ণের মণ্ড-হরফ পদ্ধতি ত্যাগ করে স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ তৈরি করতে হবে৤ বাংলা যুক্তবর্ণ হবে বর্ণ-সমবায় পদ্ধতির-- অর্থাৎ বর্ণগুলি পরপর বসবে৤ কেবল যুক্তবর্ণের প্রথম বর্ণ হবে আয়তনে ছোটো, কিন্তু অক্ষত, অবিকৃত, অখণ্ডিত৤ যেমন--

উচ্চ, কল্পনা, খদ্দর, গল্প, আচ্ছা, রম্ভা, ঘ্‍রীত, প্‍রবল, ব্‍রীহৎ৤ 

        ফরাসিভাষী(বাংলাভাষায় অতীব সাবলীল এবং বাঙালির মতো দক্ষ বাংলা লিখিয়ে) ফাদার দ্যতিয়েন সন্ধি নিয়ে কৌতুক করে বলেছেন-- “অ আর ই যু্ক্ত হলে দেখা দেয় এ-- ঠিক যেন রসায়নের ফর্মুলা৤” বাংলায় যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রেও ঠিক এই একই কথা প্রযোজ্য-- দুটি বা তিনটি হরফ মিলিয়ে তৈরি হয় 
মণ্ড ! তিনি অন্য প্রসঙ্গে কৌতুক করে অন্যত্র বলেছেন-- ‘বুঝলাম, বাঙালিরা, বলে এক, আর লেখে আর এক৤’ 



        প্রচলিত যুক্তবর্ণ গঠনে তিনটি প্রধান ভাগ দেখা যায় -- 









        




 যুক্তবর্ণগুলি সবক্ষেত্রেই স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ করে লিখতে হবে৤ বাংলা বানানে যে ক্লিষ্ট রীতি দেখা যায়-- যুক্তবর্ণ গঠনেও সেই একই ধরনের ক্লিষ্ট রীতি দেখা যায়৤ বানানের ক্ষেত্রে যেমন উচ্চারণের প্রতি বিশ্বস্ত হতে হবে, যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রে তেমনি হরফের প্রতি বিশ্বস্ত হতে হবে৤ 


        বাংলা যুক্তবর্ণগুলি বহু ক্ষেত্রে ইচ্ছে করলে ভেঙে লেখা যায়, বা ভেঙে ভেঙে পড়া যায়, যেমন-- “বিস্তর পুস্তক দোস্তকে সস্তায় গস্তায়”, এ ক্ষেত্রে যুক্তবর্ণ ভেঙে লেখা এবং বলা যাবে-- “বিস্‌তর পুস্‌তক দোস্‌তকে সস্‌তায় গস্‌তায়”৤ কিন্তু স+ত(স্‌+ত) যখন যুক্তধ্বনি হয়, তখন সে ধ্বনি-সমবায়  অবিভাজ্য৤ তখন ভেঙে ভেঙে লেখা বা বলা যাবে না, কারণ তখন তা সান্দ্র, প্রথম ধ্বনিটি হলন্ত হচ্ছে, যেমন-- “স্তরে স্তরে স্তম্ভিত মেঘস্তূপ”৤ বিশেষ উপায়ে নতুন যুক্তবর্ণ লেখার পদ্ধতি ব্যবহার না-করে এক্ষেত্রে যুক্তবর্ণ ভাঙতে চাইলে তা কিন্তু সেই প্রাচীন ‘শনিবারের চিঠি’-র ব্যঙ্গের খোরাক হবে-- “সটেশন আর সটিমার৤ এ কি সটাইল রে বাবা”(স্টেশন, স্টিমার, স্টাইল)৤

 জ্‌+ঞ=জ্ঞ, এবং ঞ্‌+জ=ঞ্জ
  এই যুক্ত বর্ণদুটির মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য অনেকেই করতে পারেন না৤ বিজ্ঞান লিখতে অনেকেই বিঞ্জান
লেখেন, (বিঞ্জান নহে, হবে জ্ঞ=জ্‍ঞ)৤ লেখা দেখেছি কোচিং সেন্টারেও কলা এবং “বিঞ্জান” পড়ানো হয়! 



৪৮


        যুক্তবর্ণের ব্যাপারে এই লেখকের লেখা একটি নিবন্ধ দেখা যেতে পারে ‘দেশ’ সাহিত্য পত্রে(বাংলা যুক্তবর্ণের প্রকৃতি নির্ধারণ-- ০১/০৮/১৯৮৭, পৃঃ ৩২-৩৩)৤ তার আগেই কোলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে(সল্টলেক স্টেডিয়াম) অনুষ্ঠিত এশিয়াটিক সোসাইটি আয়োজিত ৩৩-তম অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্স-এ(অক্টোবর, ১৯৮৬) প্রবন্ধটি পাঠ করা হয়েছিল এবং উপস্থিত পণ্ডিত ও গুণীজনের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছিল৤  



        নতুন বানানে শব্দকয়টি লিখে দেখা যাক--

বিস্তর পুস্তক দোস্তকে সস্তায় গস্তায় = বীস্তর পুস্তক দৗস্তক৙ শস্তায় গস্তায়৤

স্তরে স্তরে স্তম্ভিত মেঘস্তূপ=স্তর৙ স্তর৙ স্তম্ভীত ম৙ঘস্তুপ৤ 

সটেশন আর সটিমার৤ এ কি সটাইল রে বাবা (প্রাচীন দিনে শনিবারের চিঠিতে ব্যঙ্গ! )
= শট৙শন আর শটীমার, এ কী শটাইল র৙ বাবা৤
 

স্টেশন, স্টিমার, স্টাইল= শ্ট৙শন, শ্টীমার, শ্টাইল৤ ( বাংলায় হবে, নইলে তা [দন্ত্য স এবং মূর্ধন্য ট মিলে] স্ত উচ্চারণ হয়ে যায়, তাই) ট৙শন, টীমার, টাইল৤ 


       বাংলায় দন্ত্য-স এবং মূর্ধন্য-ট যুক্তধ্বনি হয় না৤ তাহলে তখন তা উচ্চারণে হয়ে যায়, স্ত৤ তাই বাংলায় স্টিমার নয়, হবে টীমার৤ ট৙শন, টীমার, টাইল৤ 

        জদী স্ট ল৙খা হয় তব৙ বাংলায় তার উচ্চারন হব৙ “স্ত”৤ একটু খ৙য়াল কৗর৙ উচ্চারন করল৙ই তা পরীশ্কার বৗঝা জাব৙৤৤ ইংর৙জীর উচ্চারন রীতী আর বাংলার উচ্চারন রীতী এাক নয়৤ বাংলা উচ্চারন এাকদম স্পশ্ট, ইংর৙জীর মতৗ তা কখনৗই অস্পশ্ট গৗল গৗল দী-শ্শর (দ্বিস্বর) ঘঁ৙শা নয়৤ 

একটু নতুন-বানান৙ লীখ৙ দ৙঄খা গ৙঄লৗ তা পড়া জায় কীনা?




       বাংলা যুক্তবর্ণের বিবর্তন--

        বাংলা যুক্তবর্ণের বিবর্তন যেভাবে হয়েছে তার একটা সম্পূর্ণ আনুমানিক  চেহারা তুলে ধরা যেতে পারে৤ সময় এবং শ্রম বাঁচাবার জন্য, সহজে লেখার সুবিধার জন্য-- অনেক হরফ একত্র করে দলা পাকিয়ে মণ্ড-হরফ করে প্রাচীন দিনে বাংলা যুক্তবর্ণ লেখা হত৤ এখনও তা প্রায় সেই একইভাবে লেখা চলছে, কিন্তু এর সরলীকরণ হওয়া দরকার৤  





      দ৙শ →দেশ 


































হাতে করে লেখার সুবিধার জন্য এখানকার সংযুক্ত চ-কে ব-এর মতো করে লেখা হয়৤








প্রাচীন দিনে ণ 


লেখা হত মাত্রাহীন ল-এর 
মতো করে৤ দুটির মধ্যে তফাত বোঝা কঠিন হত 








এটি (—ও ) দেখতে যেন উপরে মাত্রা দেওয়া স্বরবর্ণ ‘ও’


   






এটি (—এ ) দেখতে যেন উপরে মাত্রা দেওয়া স্বরবর্ণ  ‘এ’













ন-এর সঙ্গে সংযুক্ত অংশটি হ-এর মতো দেখতে হলেও এটি আসলে থ-এর কর্তিত প্রথম অর্ধ-অংশ৤









প্রাচীন দিনে ‘ণ’
লেখা হত ল-এর  
  মতো করে৤ দুটি বর্ণের মধ্যে তফাত বোঝা কঠিন হত৤ 
তাই ষ্‌+ণ=ষ৏  গঠন বোঝাও কঠিন হত৤ দেখে এটি ষ্‌+ঞ = ষ৏    মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে তা নয়৤   

 
"স্মরণযোগ্য: ঞ-এর আকৃতিগত প্রভাবেই পঞ্চদশ শতাব্দীর  
[ ]

=
 (ষ্+ণ), অষ্টাদশ শতকে এসে ক্রমান্বয়ে

-রূপে পরিণত হয়েছিল" বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া "বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা" [বাংলা একাডেমী:ঢাকা, বাংলাদেশ, প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি-১৯৮৪, পৃঃ৪৪]। 












এমনিভাবে এই বিবর্তন হয়ে থাকতে পারে৤ তবে এর সবকিছু সোজাভাবে সহজে ব্যাখ্যা করা যাবে না৤ এ-বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হওয়া দরকার৤






৫১



        এ ব্যাপারে পাঠকদের অস্পষ্টতা কেটে যাবে বিশেষজ্ঞের অভিমত শুনলেবাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া তাঁর 'বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা' [বাংলা একাডেমী:ঢাকা, বাংলাদেশ, প্রথম প্রকাশ,ফেব্রুয়ারি-১৯৮৪] গ্রন্থে বলেছেন-- যুক্তবর্ণের মণ্ডরূপ বা মণ্ডগঠন বিষয়ে “নিজের পছন্দ মতো 'রূপ'(shape) বের করার দিকে সংশ্লিষ্ট লিপিকরদের নজর ছিল”(পৃঃ২৬)“মিতলেখনের দিক থেকে যুক্তবর্ণগুলি একটু বেশি রকম দরকারি বলেই মনে হতে পারেকারণ, বাংলালিপির ধারণ ক্ষমতা এ যুক্তবর্ণগুলির বদৌলতে অনেকখানি বেড়ে যায়... সংশ্লিষ্ট হরফগুলির ধারক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া অধিকাংশ যুক্তবর্ণই বস্তুত আমাদের কাছে অস্পষ্ট হলেও আমরা অবলীলাক্রমে সেগুলির ব্যবহার করিসাধারণত আমাদের মনে এ নিয়ে কোন বিতর্ক জাগে না, কিংবা জাগলেও আমরা তা নিবৃত্ত করে রাখি... পরবর্তী কালে সেগুলিই যে দ্রুতলিখন প্রবণতায় অস্পষ্ট হয়ে গেছে; তা বলা যায়... এসব যুক্তবর্ণ আজকে যে অবস্থায় এসে আমাদের হাতে ধরা দিয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে জানতে হলে অথবা সেগুলির অন্তর্নিহিত বর্ণসমূহের অবয়ব সঠিকভাবে শনাক্ত করতে হলে, আমাদের আজকের দিনের বাংলা বর্ণমালার মূল হরফ অবয়বকে মাপকাঠি হিসেবে ধরে নিলে চলবে না৤  ... অধুনা প্রচলিত হরফদেহে এগুলির সন্ধান করতে যাওয়া শুধু যে ফলপ্রদ নয়, তা-ই নয়; রীতিমতো ভ্রান্তিজনকও বটে৤ সেই সঙ্গে এ প্রয়াস রীতিমতো গোঁজামিলের...প্রচলিত যুক্তবর্ণ সম্পর্কে আরও একটি কথা বিশেষভাবে বিবেচ্যসে হল:--এগুলি একই যুগে একই সময়ে গঠিত হয়েছিল, এমন নয়; বরং বিভিন্ন যুগে ও বিভিন্ন সময়ে গঠিত হয়েছিল৤”(পৃঃ১৯৮-৯৯)। 

        এসব এখন আর এমন করে, দলা পাকিয়ে লেখার দরকার নেই৤ অবশ্য কারও যদি শখ থাকে যে প্রাচীন দিনের মতো করে লিখবেন, তাহলে তাকে বাধা দেবার দরকার নেই৤ যখন তিনি দেখবেন এবং বুঝবেন যে, আধুনিক ব্যবস্থায় লেখা অনেক সহজ এবং স্বচ্ছ তখন তিনি নিজেই পুরানো ব্যবস্থা ছেড়ে নতুন পদ্ধতিতে লিখতে শুরু করবেন৤ ধরি কম্পিউটার কিবোর্ডের সাহায্যে ইংরেজিতে চিঠি টাইপ করা হল, এবং তারপরে একটি বাংলা চিঠিও টাইপ করা হল৤



৫২

       তাহলেই বোঝা যাবে বাংলায় টাইপ করা কত দুর্ঘট ব্যাপার৤ কিন্তু নতুন বানানে  নতুন কিবোর্ডের সাহায্যে বাংলা টাইপ করা প্রায় ইংরেজির মতোই সহজ হবে৤ তখন বাংলা টাইপ করা আর তেমন দুর্ঘট ব্যাপার হবে না৤ তখন বাংলা টাইপ করা আর ত৙঄মন দু৒ঘট ব৙঄পার হব৙ না(এই পংক্‍তীটী নতুন-বানান৙ তথা ফলীত বাংলায় Applied Bangla ল৙খা)৤ তখন অবশ্য বাংলা টাইপ করার জন্য বাংলা ইউনিকোড ফন্টের কিবোর্ড আলাদা হবে৤ একথা ঠিক যে সহজ হলেও বাংলা লিখনব্যবস্থা যে জটিল, complex script সে কথাটি মনে রাখা দরকার, তাই তা বাংলা হরফব্যবস্থার জটিলতার কারণে ইংরেজি কিবোর্ড থেকে পিছিয়েই থাকবে৤ 

        আমরা যে ধারক-বাক্য লিখে বোঝার চেষ্টা করেছিলাম নতুন বানানে, নতুন ব্যবস্থায়, নতুন হরফে বাংলা লেখা কেমন হবে, সেই বাক্যটি এবার আবার লিখে দেখা যাক৤ তবে আবারও  বলে রাখি যে, নতুনব্যবস্থার সবটুকু একদিনে একবারে প্রয়োগ করার--কোনও  চেষ্টা করা হবে না৤ বরং অতীব সামান্য একটুখানি পরিবর্তন দিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু হবে৤ মানুষ যেন সহজে তা গ্রহণ করতে পারেন, এবং সানন্দে ব্যবহার করেন, তেমন করেই তা শুরু করতে হবে৤ কোনও প্রতিরোধ তৈরি হোক, এ উদ্দেশ্য নিয়ে তো এসকল প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়নি, মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাবার জন্যই তা উত্থাপন করা৤ অতি ধীরে জীবনের তাল ও লয়ের সঙ্গে মিলিয়ে সমস্ত বিষয়টি সারতে হবে৤ বাংলা বানান সংস্কার কোনও গোলোকধাঁধা নয়, কোনও স্বেচ্ছাচার নয়, জীবনের গতিকে সহজ সুন্দর ও সাবলীল করার উদ্দেশ্যের দিকে এর গতিমুখ৤ প্রথমদিকে এমন অদ্ভুত বানান দেখলে খুবই খারাপ লাগবে সন্দেহ নেই, কিন্তু একটু মন দিয়ে দেখলে এবং বোঝার চেষ্টা করলে অতখানি খারাপ লাগবে না৤ বরং এর যে আসল সুবিধা, তা খানিকটা স্পষ্ট হতে পারে৤ কারণ তখন বানান নিয়ে আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে না৤


       বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের নিখুঁত গল্পটির ডালপালা অর্ধেক ছড়াতেই ঋতু ভুঁইঞা আর ঐন্দ্রিলা ধড়ফড়িয়ে দারুণ হৈ-হৈ করে উঠল-- ওঃ, ব্যাস্ এবার থামো তো, বুঝেছি বড্ডো পুরানো ঢঙের কেমন এক গল্প যার নীতিবাক্য হল,“মূঢ় আড়ম্বর ও আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ ক্ষতি”-- তাই না, এ্যাঁ?

        এটাই আমরা কিছুটা আগে খানিকটা আলোচনার পরে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছিলাম, পরিবর্তনের সেই স্তরে তা কেমন হবে৤ সেটি আবার পড়ে দেখা যাক--


        বীষণ্ণ ওউদাসীন্য ষাদী বাংলাভাষায় প্রচলীশপনীখুঁত গল্পটীর ডালপালা অর্ধক ছড়াত ৒রীতু ভুঁইঞা আর ওইন্দ্রীলা ধড়ফড়ী দারুণ -হ৚ ক৚ উঠল৚--ওঃ, ৙঄স্ এবার থাম৚ ত৚, বুঝছীড্ড৚ পুরান৚ ঢঙ৙঄মন এাক গল্প যার নীতীবাক্য হ৚ল৚,“মুঢ় আড়ম্বর ও আত্মশ্লাঘার ফল জীবন বীঘ্ন ও ব্‍রীহৎ ক্ষতী”-- তাই না, ৙঄?
(নতুন রীতিতে ঋ=৒রী, বৃ=ব্‍রী

 = রু লেখা হবে)


        এবারে আরও পূর্ণাঙ্গ স্তরে সে পরিবর্তন কেমন হবে তা দেখা যাক৤ এবারে কিন্তু আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে, স্বর এবং ব্যঞ্জনবর্ণ সংস্কার করা, বর্ণমালার সজ্জা নতুন অবস্থায় কেমন হবে, সে কথা, এবং লিপির গঠন নতুন পর্যায়ে কেমন হবে সে কথাও আলোচনা করা হয়েছে৤ তাই, এবার বর্ণধারক বাক্যের উদাহরণ অনেক পূর্ণাঙ্গ হয়েছে৤




৫৩

আলোচনা অনেক দূরই এগিয়েছে, আরও খানিকটা আলোচনা করে তবে প্রসঙ্গের সমাপ্তি ঘটানো যাবে৤ অবশ্য এ আলোচনা অতি দীর্ঘই হতে পারে কারণ-- প্রশ্ন, সংশয় তো কম নয়৤ সেসব, একে একে আলোচিত হবে৤ সংশয় রেখে এগোনোর ইচ্ছে নেই, দরকারও তো নেই৤ 

        ভাষা-সংস্কারের পরে তথা-- (১)বর্ণমালা সংস্কার, (২)নতুন লিপি নির্মাণ, (৩)বর্ণমালার সজ্জা, (৪)লিখন পদ্ধতির সংস্কার, (৫)লিপির গঠন, (৬)যুক্তবর্ণ সংগঠন ইত্যাদি বিষয়ে সংস্কার সম্পন্ন হবার পরে এই বাক্যটির রূপ কেমন হবে তা নিচে দেখানো হল:--



       বীশন্ন ওউদাশীন্ন৙ উশাবৗউদী বাংলাভাশায় প্‍রচলীত ইশপ৙র নীখুঁৎ  গল্পটীর ডালপালা অ৒ধ৙ক ছড়াত৙ই ৒রীতু ভুঁইয়াঁ আর ওইন্‍দ্‍রীলা ধড়ফড়ীয়৙ দারুন হৗই-হৗই কর৙ উঠল--ওঃ, ব৙঄স্ এবার থাম, বুঝ৙ছী বড্ড পুরান ঢঙ৙র ক৙঄মৗন এাক গল্প জার নীতী বাক্ক৖ হল৚, “মুঢ়৹ আড়ম্বর ও আত্তশ্লাঘার ফল জীবন৙ বীঘ্ন ও ব্‍রীহৎ খতী-- তাই না, এ৙঄৺?

এমনি আরও একটি কবিতা--

বাঃ, ওই যে আকাশ ঢাকা
গহন-ঘন চিকুর আঁধার এমন
        দেখিছ উপরে ঠায়,
অচিন্ত্য-ক্ষণে সাফ, ক্ষণে ভরা
আকাশ সড়কে সজল একী গূঢ়        
        রঙিন বিদ্যুৎ দেখা যায়,
ফুটিবে বুঝি কোন আলো-ফুল
        অংশুর ডালিতে তথায়৤


বানান-সংস্কারের পরে এটি হবে-- 



বাঃ, ওই জ৙ আকাশ ঢাকা

গহন-ঘন চীকুর আঁধার এামন

       দ৙খীছ উপর৙ ঠায়,

অচীন্ত-খন৙ সাফ, খন৙ ভরা

আকাশ শড়ক৙ শজল একী গুঢ়৹

       রঙীন বীদ্দুৎ দ৙঄খা জায়,

ফুটীব৙ বুঝী কৗন্‌ আলৗ-ফুল

       অংশুর ডালীত৙ তথায়৤




আশা করি এখন খানিকটা বোঝা যাচ্ছে৤ কারণ আমরা অনেকটা আলোচনা করেছি৤ একটু ধৈর্য ধরে যদি ব্যাপারটা লক্ষ করে থাকেন, তবে হয়তো খানিকটা বোঝা গেছে৤ 



(এর পরে তৃতীয় অংশ, পৃঃ- ৫৪)




তৃতীয় অংশ দেখুন
লিংক: http://banglainternational.blogspot.in/2014/05/bangla-bhasha-sanskar.html


সর্বশেষ পরিমার্জন -- ১৪/১০/২০১৮ 

লেবেলসমূহ: